জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্র-যুব-নারী সংগঠনসমূহের সংবাদ সম্মেলন
মন্টি-দয়াসোনা অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও অপহৃতদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধারসহ ৫ দফা দাবি : কর্মসূচী ঘোষণা
ঢাকা : হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে সুস্থভাবে উদ্ধার এবং অপহরণকারী ও তাদের মদদ দাতাদের গ্রেফতারের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে আজ ২৮ মার্চ ২০১৮, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন বিরোধী নারী-যুব-ছাত্র সংগঠনসমূহ-এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি রওশন আরা রুশো, বিপ্লবী নারী মুক্তির আহ্বায়ক নাাসিমা নাজনীন, নারী সংহতির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পপি সরকার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন-এর সধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (খালেকুজ্জামান)-এর সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন-এর সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা, ছাত্র ঐক্য ফোরাম-এর যুগ্ম আহ্বায়ক সরকার আল ইমরান ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর সভাপতি নিরূপা চাকমা। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নিরূপা চাকমা, থুইক্যচিং মারমা, গোলাম মোস্তফা, সরকার আল ইমরান, রওশন আরা রুশো, নাঈমা খালেদ মনিকা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অপহরণকারীরা রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট একটি সন্ত্রাসী চক্র। ইতোমধ্যে এ চক্রটি রাষ্ট্রীয় মদদে সাবেক পিসিপি সভাপতি ও ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাসহ অনেকজনকে খুন করেছে। প্রশাসনের নাগের ডগায় ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হয় না।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনা শাসন চলছে। জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, হামলা, অপহরণ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন ঘটনা সংঘটিত করা হয়। মন্টি ও দয়াসোনা চাকমা অপহরণ ঘটনাটি রাজনৈতিক ও পরিকল্পিত। তারা উভয়েই রমেল হত্যা ও বিলাইছড়িতে দুই সহোদরাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিবাদী আন্দোলনের সময় খুবই সাহসিকতার সাথে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের প্রতিবাদী কন্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য স্থানীয় সেনা-প্রশাসন সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে এ অপহরণ ঘটনাটিতে ঘটিয়েছে।

সারা দেশে অগণতান্ত্রিক শাসন চলছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলননে আরো বলা হয়, সারা দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ। দেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খুন-ধর্ষণ-নির্যাতন-অপহণের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সবচে’ আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে মানুষ খুন-গুমের শিকার হচ্ছে।


মন্টি-দয়াসোনা চাকমা অপহরণ গণতন্ত্রমনা ও আন্দোলনকারীদের জন্য একটি অশনি সংকেত উল্লেখ করে আরো বরলা হয়, এর বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের সকল গণতন্ত্রমনা ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে মন্টি ও দয়াসোনা চাকমাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া না হলে, সরকার প্রশাসন তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো– (১) অবিলম্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকামাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে হবে; (২) অপহরণকারী ও তাদের মদদ দাতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে; (৩) পাহাড় ও সমতলে সংঘটিত সকল ধর্ষণ-গুম-খুন-অপহরণের বিচার করতে হবে; (৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে; (৫) পাহাড় ও সমতলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে– আগামী ২ এপ্রিল ২০১৮, ঢাকায় মশাল মিছিল ও ৬ এপ্রিল ঢাকায় নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশ।

______
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।