মহালছড়িতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ১৮ বছর আজ

সিএইচটি নিউজ ডেস্ক ।। আজ ২৬ আগস্ট ২০২১ খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় পাহাড়িদের উপর সংঘটিত সম্প্রদায়িক হামলার ১৮ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৩ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় সেটলার বাঙালিরা ১০টি’র অধিক পাহাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চার শতাধিক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছিল।
সেদিন সেটলারদের হামলায় নৃশংসভাবে খুন হন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিনোদ বিহারী খীসা ও আট মাস বয়সী এক শিশু।
হামলারকারী সেটলাররা ১০ জন জুম্ম নারীকে ধর্ষণ করে, ৪টি বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়, বুদ্ধমূর্তি ভাংচুর করে এবং ব্যাপক লুটপাট চালায়। সেনা-সেটলারদের আক্রমনে সেদিন অর্ধশতাধিক পাহাড়ি আহত হয়। লাঞ্ছিত করা হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও।
সেনাবাহিনীর সোর্স হিসেবে পরিচিতি রূপন মহাজন (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ করে সেটলাররা সেদিন এই সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।
ঘটনার দিন ছিল মহালছড়ি বাজারে সাপ্তাহিক হাটবার। পাহাড়িরা কাঁচা তরকারি নিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে যেতে চাইলে সেটেলাররা বাজারে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে পাহাড়িরা বাবুপাড়া সংলগ্ন রাস্তার পাশে বাজার বসায়। সেখানেও সেটেলাররা সংঘবদ্ধভাবে গিয়ে বাধা দেয় এবং দোকানগুলো ভাঙচুর করে চলে যায়।
এরপর সকাল প্রায় সাড়ে ৯ টার দিকে সেটেলাররা মিছিল নিয়ে বাবুপাড়া গ্রামে হামলা শুরু করে দেয়। পরে সেনাসদস্যরাও হামলায় অংশ নেয়। হামলার সময় ২১ ইবিআর-এর সেনা সদস্যরা বোটযোগে সেটেলার বাঙালিদের পেট্রোল ও কেরোসিন সরবরাহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ হামলার ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। সচেতন ও প্রগতিবাদী ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।

কিন্তু ১৮ বছরেও এ বর্বর হামলার কোন বিচার হয়নি। নেওয়া হয়নি হামলাকারী সেনা-সেটলারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর প্রায় সময়ই এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা থাকে।
এ ঘটনার পরবর্তীতে ধরাবাহিকভাবে মাইসছড়ি, সাজেক, খাগড়াছড়ি, শনখোলা পাড়া, তাইন্দং, বগাছড়ি, লংগদুসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিটি ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কায়েমী স্বার্থবাদী অংশটি জড়িত থাকে। মুলত তারাই এসব সাম্প্রদায়িক হামলার মূল উস্কানিদাতা! মহালছড়ি হামলার ঘটনায়ও তার কোন ব্যতিক্রম ছিল না।
মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনা, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থাগুলো পাহাড়ি জনগণের জন্য নিরাপত্তা প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করে না। যদি তারা সেটা করতো তাহলে মহালছড়িসহ অন্যান্য জায়গায় এ ধরনের ঘটনা নিশ্চয় সংঘটিত হতো না।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।