আলোচনা সভা

মহালছড়িতে ২০০৩ সালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি

0

মহালছড়ি প্রতিনিধি ।। খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ২০০৩ সালের ২৬ আগস্ট পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

আজ ২৬ আগস্ট ২০২১, বৃহস্পতিবার হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।

“পূর্ণস্বায়ত্তশাসন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি নেই, আসুন, আত্মরক্ষার্থে সংগঠিত হই” এই শ্লোগানে ২০০৩ সালের ২৬ আগস্ট মহালছড়িতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিনোদ বিহারী খীসাকে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ এযাবতকালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার সুস্থ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মহালছড়ি এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মহালছড়ি এলাকার মুরুব্বী কংজরী মার্মার সভাপতিত্বে ও প্রিয় চাকমার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন  কেরেঙ্গানালা গ্রামের কার্বারী স্বপন তালুকদার, নতুন পাড়ার কার্বারী এজং চাকমা, ভুয়াটেক গ্রামের যুব প্রতিনিধি উষাময় খীসা, ইউপিডিএফের মহালছড়ি উপজেলা সমন্বয়ক দিগন্ত চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক বিকাশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক নেতা সুমন্ত চাকমা, ২০০৩ সালের সাম্প্রদায়িক হামলার ভিকটিম নিদর্শন খীসা।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০৩ সালের ২৬ আগস্ট মহালছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনীর প্রত্যক।ষ সহযোগীতায় সেটেলার বাঙালিরা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বাবু পাড়া, পাহাড়তলি, লেমুছড়ি সহ ১০টি’র অধিক গ্রামে হামলা চালিয়ে প্রায় ৪০০ শতাধিক ঘর-বাড়িসহ ৪টি বৌদ্ধ বিহার জ্বালিয়ে দেয়। এই হামলায় সেটলাররা প্রবীন মুরুব্বী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিনোদ বিহারী খীসা ও আট মাসের শিশু কৃতনকে হত্যা করে। এছাড়া হামলাকারী সেটলাররা ১০ জন পাহাড়ি নারী ও শিশুকে ধর্ষণ, বুদ্ধমূর্তি ভাংচুরসহ প্রতিটি গ্রামে ব্যাপক লুটপাট চালায়। এ হামলায় অনেক নিরীহ পাহাড়ি আহত হয়।

বক্তারা বলেন, অতীতে সংঘটিত কাউখালী, লংগদু, লোগাং, নান্যাচর গণহত্যাসহ এ যাবত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে। আর সেটলাররা বার বার এ ধরনের ঘটনা করতে ধৃষ্টতা দেখায়।

বক্তারা মহালছড়িসহ এ যাবতকালে সংঘটিত গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন, যদি এসব ঘটনার বিচার না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরো সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। কারণ বিচারহীনতার সুযোগেই সেটলাররা পাহাড়িদের ওপর এ ধরনের হামলার সংস্কৃতি লালন করছে।

শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে বিলুপ্ত করতে চাইছে অভিযোগ করে বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখল-উচ্ছেদ করে, জায়গা-জমির অধিকার কেড়ে নিয়ে, দ্বিধা বিভক্ত করে আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। সভ্য সমাজে এমন নারকীয়, পাশবিক ও মধ্যেযুগীয় ঘটনা কল্পনাতীত। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতি,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন।

সভার সভাপতি কংজরী মার্মা বলেন, আমরা যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছি সবাই পাহাড়ি, বাঙালী নয়, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। শাসকশ্রেণী এই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেই ষড়যন্ত্রের নীলনক্সাকে ধ্বংস করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। শাসকগোষ্ঠীর ভয়ে আর চুপ করে থাকার আর সময় নেই আমাদের।

তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর বিকল্প নেই।

সভা থেকে মহালছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবতকালে সংঘটিত সকল সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানানো হয়।  


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More