‘মহিষাসুরের মতো যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে, তাদের পতন অনিবার্য’- কাউখালির বিশাল নারী সম্মেলনে প্রসিত খীসা’র অডিও বার্তা

0

কাউখালী উপজেলার নতুন কমিটিসহ ৪ ইউপিতে পা. চ. নারী সংঘের কমিটি গঠিত

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

রাঙামাটির কাউখালী কাউখালি উপজেলার কলমপতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কাউখালী উপজেলা শাখার দ্বিতীয় নারী সম্মেলন উপলক্ষে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে নারী সংঘের কাউখালী উপজেলার নতুন কমিটিসহ অপর চার ইউপি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

আজ বুধবার (১৯ মার্চ ২০২৫) “নারীর সম্মান-সম্ভ্রম ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে জেগে ওঠো, হানাদার বাহিনী স্টাইলে লুটপাট, নারীদের মারধর ও চিহ্নিত দাগী সন্ত্রাসী দিয়ে উৎপাত সৃষ্টি বরদাস্ত করব না” এই আহ্বানে আহূত সমাবেশে পাঁচ সহস্রাধিক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।


সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে লাউড স্পিকারে বাজতে থাকে বিপ্লবী গণসঙ্গীত। বিভিন্ন ঘটনায় নারী আন্দোলনের প্রচারপত্র থেকে পাঠ করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নারী নেত্রীরা বক্তব্য দিয়ে সম্মেলনস্থলে এক সংগ্রামী আবহ তৈরি করে।

সকাল ৯টায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে কুখ্যাত আয়নাঘর থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ইউপিডিএফের ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমা সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে উপস্থিত কর্মীবাহিনী মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে ওঠে। এ সময় সমবেত জনতা স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়ে তাকে স্বাগত জানালে লড়াই সংগ্রামে এক উদ্দীপনাময়ী আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এরপরে “আমরা করব জয়” গানের মাধ্যমে সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়।

মাইকেল চাকমাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে। 

সমবেত জনতা স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়ে মাইকেল চাকমাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।


অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে বাজানো হয় সাইরেন, পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য এন্টি চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইউপিডিএফ’র সভাপতি প্রসিত খীসার অডিও বার্তা বাজিয়ে শোনানো হয়।

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমা, ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঊষাতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রূপন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরাসহ কাউখালি উপজেলার ইউপির জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন উপজেলার নারীসংঘের প্রতিনিধিরা।

ইউপিডিএফ’র সভাপতি প্রসীত খীসা প্রদত্ত অডিও বার্তায় কাউখালীতে গত ৭ মার্চ সেনাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ভুমিকা পালনকারী নারী ও জনতাকে বীরোচিত অভিবাদন জানিয়ে বলেন, কাউখালীর ‘রাঙিপাড়া, ডেবাছড়ি, উল্লো, পানছড়ি, হাজাছড়ি, শুকনাছড়ি, তালুকদার পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মা-বোন বাপ-ভাইদের, যারা ‘উজোও উজোও’ ধ্বনি দিয়ে গেল ৭ মার্চ হানাদার বাহিনীর হামলা, লুটপাট, তল্লাশি ও মারধরের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছেন; বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়ে ‘জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারীদের মতো’ যারা সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ‘৭ মার্চের সংগ্রামী বন্ধুদের’ করতালি মাধ্যমে সম্মান জানানোর জন্য আহ্বান জানালে উপস্থিত ৫ হাজারের অধিক নারী ও জনতা তুমুল করতালি দিয়ে তাদের সম্মান জানান।  

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। 


৭ মার্চ-এর চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জনগণের উদ্দেশ্য প্রসীত খীসা বলেন, জনগণের ক্ষমতা, সত্য ও ন্যায়ের শক্তি প্রমাণিত হয়েছে; চোখের সামনে আপনারা হাসিনার পতন দেখেছেন, ভবিষ্যতে এর চাইতেও বড় প্রমাণ পাবেন। আমি বলবো ৭ মার্চ-এর চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হোন, লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হোন। অসুর দৈত্যরা যত শক্তিধরই হোক, তারা অন্যায় ধ্বংসের প্রতিনিধি, সে কারণে তাদের পতন অনিবার্য, সেটা কখনই ভুলে যাবেন না।

অডিও বার্তায় তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা মহিষাসুরের মতো দানবীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে আমাদের ঘরবাড়ি তছনছ করে বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করতে উদ্যত, তাদেরও পতন ঘটবে আমাদের প্রতিবাদী মা-বোনদের হাতে। গেল ৭ মার্চ কাউখালিতে তার প্রথম অধ্যায়ের মহড়া হয়েছে মাত্র, আপনারা তাতে গৌরবদীপ্ত ভূমিকা রেখেছেন। সেনাদের অস্ত্র গোলাবারুদ থাকা সত্ত্বেও তারা সেদিন একটি গুলি ছুঁড়তে পারেনি। তাদের হাতের বন্দুক সেদিন অকার্যকর হয়ে পড়ে। সেদিন জনতার রোষ দেখে সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়, দুর্বৃত্ত মুখোশরা সেনা জিপ-পিকআপে ইঁদুরের মতো লুকিয়ে ছিল, আপনারা দেখবেন এদের পরিণতি আরও খারাপ হবে। সেনাদের নাকের ডগায় আঙুল উঁচিয়ে সাহসী যুবকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। হ্যাঁ, এভাবেই অন্যায়ের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।

ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার দায় সেনা, পুলিশকে নিতে হবে উল্লেখ করে প্রসীত খীসা বলেন, কাউখালীর ঘটনায় নারীর ওপর হামলাকারী চিহ্নিত বখাটে মাস্তানদের গ্রেফতার না করে উল্টো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউপিডিএফ ও গণফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের মামলা দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের নিবৃত্ত করা যাবে না। ৮ মার্চ ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে অংশ-নেয়া এইচডব্লিউএফ নেত্রীদেরও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ সমাবেশ থেকে জানিয়ে দিতে চাই, মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা তুলে না নিলে, এলাকায় অস্থিরতা দেখা দেবে, কাউখালি অচল হয়ে পড়বে, রাঙ্গামাটিও অচল হবে। তারজন্য সেনা, পুলিশকে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি বলেন, কাউখালি কিছু অংশের জনতার প্রতিবাদের ফলে ৭ মার্চ সেনারা কাবু হয়ে পড়ে। যদি গোটা কাউখালি জেগে ওঠে, যদি গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর থেকে দক্ষিণাঞ্চল সমুদ্রের মতো তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তখন তাদের পুরোদমে পতন হবে। পাকিস্তানি বাহিনী শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও অসুর দৈত্যের তাণ্ডবলীলা চালানোর কারণে তাদের পতন ঘটে, পাহাড়েও অসুরদের পতন অনিবার্য।

তিনি আরো বলেন, আমরা ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ কাউখালি কলমপতি হত্যাকাণ্ডের কথা গভীর দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে স্মরণ করি। সে সময় কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় নি। বর্তমানে কাউখালিবাসী জেগে উঠেছে! আর কোন হত্যাকাণ্ড তারা বরদাস্ত করবে না। তারা আর কচুকাটা হবার জন্য জল্লাদের কিরিচের নিচে গলা বাড়িয়ে দেবে না।

অডিও বার্তায় ইউপিডিএফের সভাপতি বলেন, ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার অন্য ২৭টি ভোটকেন্দ্রের ভোটারদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটকেন্দ্র ‘নিল’ অর্থাৎ একেবারে শূণ্যভোট করে দিয়ে কাউখালিবাসী যে ঐক্য ও সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তার জন্যও পার্টির পক্ষ থেকে তিনটি ভোটকেন্দ্রের (বর্মাছড়ি প্রাইমারি স্কুল, নভাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল ও পানছড়ি হাইস্কুল) সম্মানিত ভোটারদের সংগ্রামী অভিবাদন জানাই। এছাড়াও গত বছর ২৬ ডিসেম্বর  ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে কাউখালির বেতবুনিয়া, ফটিকছড়ি, কলমপতিবাসীদের এগিয়ে এসে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে সফল করায় তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সরকারের দালাল বেঈমান দুর্বৃত্তদের বাড়াবড়ি বরদাস্ত করা হবে না মন্তব্য করে প্রসীত খীসা বলেন, আমাদের ওপর অন্যায় জবরদস্তি করে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবে না, সরকারের দালাল বেঈমান দুর্বৃত্তদের বাড়াবাড়ি আমরা বরদাস্ত করবো না। আমাদের ওপর আক্রমণ মুখ বুঁজে সহ্য করবো না। সাধ্যমত প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। সভা-সমাবেশ ও সস্মেলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবাদী জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রকাশিত হবে। এ নারী সম্মেলনের মাধ্যমে আগামীতে আমরা আরও বেশি সংহত ও ঐক্যবদ্ধ হবো।

ইউপিডিএফ’র সভাপতি দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই নাজুক ও অস্থির। ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের হুমকিমূলক তৎপরতা বেড়েছে। ১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি ও ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে সেনা-সেটলারদের যৌথ হামলা, ৪ জনকে হত্যা, লুটপাট, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, তাণ্ডবলীলা আমরা দেখেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত দুর্বল, পক্ষপাতদুষ্ট, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের মনোভাব উদার নয়। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির ঘটনা আমাদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে। সে কারণে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

প্রসীত খীসা, সংগঠন গড়ে তুলার মাধ্যমে প্রস্তুত হয়ে এবং পার্টির সাথে সংযোগ রক্ষা করে, শত্রুর অপপ্রচার ও গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে লড়াই সংগ্রাম দুর্বল করার ষড়যন্ত্র ভেস্তে দেয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মাইকেল চাকমা

সম্মেলনে মাইকেল চাকমা বলেন, এমন একটা সময়ে এই নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন সারাদেশে ভয়াবহভাবে নারী, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, যা দেশের জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিপীড়ন-বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বললেও দেশে নারীদের প্রতি বৈষম্য বেড়েছে। উগ্র ধর্মান্ধ  গোষ্ঠীগুলো নারীদের ঘরে বন্দি রাখার পরিকল্পনার কারণে নারীদেরকে বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবচিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের সমতল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিন্ন। এখানে আমরা প্রতিনিয়ত অন্যায় অবিচারের শিকার হচ্ছি। সামরিক শাসনের নামে আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে নস্যাৎ করে দেয়া হচ্ছে। যা আজকে আমরা ভুক্তভোগী। আমরা যখন অধিকার নিয়ে কথা বলতে যাই তখন আমাদেরকে বলা হয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী। আমরা যখন অন্যায়ে বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করি তখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়।

তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমালোচনা করে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে তার শাসন কাঠামো এখনও বিদ্যমান। এ সরকার যদি গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে রুবেল-জুনান-ধনরঞ্জন-অনিক হত্যার বিচার না করে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আরো শত রুবেল-জুনান জন্ম নিবে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে জীবন বিলিয়ে দেবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন উষাতন চাকমা।


উষাতন চাকমা বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের এই ২য় নারী সম্মেলন কাউখালি উপজেলাবাসীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত সেটলারদের কর্তৃক ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী সংঘসহ অন্যান্য নারী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে থাকে। গত ৭ই মার্চে কাউখালী পানছড়িতে নারীরাই মুখোশ-সেনাদের অন্যায় লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সাহসি ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অপশক্তি রুখে দিতে কাউখালীসহ সকল নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন কণিকা দেওয়ান।


কনিকা দেওয়ান বলেন, গত ৭ই মার্চ কাউখালীর পানছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার নারীরা সম্মিলিতভাবে সাহসিকতার সাথে সেনা মুখোশদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তা পাহাড়ের অধিকারকামী জনগণের জন্য গৌরবান্বিত হয়ে থাকবে। পার্বত্যবাসী এই প্রতিরোধ সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগুতে সাহস পাবে।

তিনি নারী সম্মেলনে আগত সকল নারীদের প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন জোরদার আহ্বান জানান। এতে উপস্থিত নারীরা সকলে তাতে প্রতিশ্রুতি দেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন অমল ত্রিপুরা।


অমল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে ছাত্র সমাজের পাশাপাশি নারী সমাজের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। যখন ছাত্র-নারী-যুব ও সর্বত্র জনগণের শক্তি একত্রিত হবে তখন পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই জোরদার হবে।

পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে ছাত্র সমাজের লড়াই অবিচল রয়েছে মন্তব্য করে অমল ত্রিপুরা বলেন, ১৯৮৯ সালে ৪ঠা মে লংগুদু গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন হয়েছিল। শত শহীদদের রক্তের বীজ থেকে জন্ম নেয়া প্রাণ প্রিয় সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার্থে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পথে অবিচল রয়েছে। আগামীতেও সংগ্রামে ধারাবাহিকতায় রক্ষা করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি বিরুদ্ধে এবং শিক্ষক সংকট নিরসন, মানসম্মত শিক্ষার দাবিতে লড়াই সংগ্রাম করে যাবে।

তিনি পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় অপশাসনের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে, নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে এবং জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজ ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোনদের বাধা না দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত হতে ও সাহস, শক্তি, অনুপ্রেরণা যোগাতে উপস্থিত মায়েদের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন রিতা চাকমা।


রিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসত্তাগুলোকে নৃতাত্ত্বিকভাবে শংকর জাতিতে পরিণত করার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত নারীদের উপর নিপীড়ন করা হচ্ছে। পাহাড়ে এ যাবতকালে যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সুতরাং সারাদেশে যে নারীদের ওপর যে সহিংসতা চলছে তাতে আমাদের নারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে। তিনি সম্মেলনে উপস্থিত নারীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন রূপন মারমা।


রুপন মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের জন্য এই কলমপতি জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাতে সেনা-সেটলাররা ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চে বিহারে মিটিংয়ের কথা বলে ৩ শতাধিক পাহাড়িকে হত্যা করেছিল। এই ইতিহাস মনে ধারণ করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে। তাই পাহাড়ের সকল নারী-পুরুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

ক্যচিঅং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারীদের জন্য এই সম্মেলনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নারীদেরকে আরো সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে। এছাড়া তিনি ইউপিডিএফের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের বিজয় অর্জিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনের ২য় অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কনিকা দেওয়ান কাউখালী উপজেলার ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সর্বসম্মতিক্রমে অংবাইমা মারমাকে সভাপতি, রোজিনা চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও মায়েংচিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নির্বাচিত করা হয়।

এছাড়া সম্মেলনে একই সাথে কাউখালী উপজেলার চার ইউপি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এতে সুভাষী চাকমাকে সভাপতি ও মিনুচিং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ঘাগড়া ইউপি কমিটি; উবাইচিং মারমাকে সভাপতি ও ছবিমা মারকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট বেতবুনিয়া ইউপি কমিটি; ক্রাথুইনু মারমাকে সভাপতি ও ধ্বনি মারমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কলমপতি ইউপি কমিটি এবং বিউটি মারমাকে সভাপতি ও সাধনা দেবী চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ফটিকছড়ি ইউপি কমিটি গঠন করা হয়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More