মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে হতাহত: তিন দাবিতে চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের বিক্ষোভ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় তিন দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
দাবিগুলো হলো- বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সর্বোচ্চ চিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, মৃতের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হওয়া সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বিচার নিশ্চিত করা।
আজ বুধবার (২৩ জুলাই ২০২৫) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেভী দে-এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি অরূপ মহাজন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম নগর সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন রাহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রিপা মজুমদার। সংহতি বক্তব্য রাখেন হিল উইমেনস ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া।

ছাত্রনেতা সোহেল চাকমা বলেন, ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি রাষ্ট্রের অপরিপক্কতা, অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ এবং দেশের জনগণের প্রতি ইউনুস সরকারের মারাত্মক অবহেলা। দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোতে যেভাবে মানুষকে হত্যা, গুম, অপহরণ চালিয়েছে, লাশ গুম করার রাজনৈতিক কালচার দাঁড় করিয়েছে তার সমস্ত রুপ আমরা ইন্টেরিম শাসনের ১ বছরের মাথায় দেখতে পাচ্ছি। কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণের পর নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ, বান্দরবানে চিংমা খিয়াংকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ধর্ষক ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার যেন অধরাই থেকে গেছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণীর এক ত্রিপুরা স্কুল ছাত্রীকে ৬জন সেটলার বাঙালি কর্তৃক ধর্ষণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ২ জন ধর্ষককে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করেনি। ধর্ষণের শিকার ভিকটিম চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
তিনি আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, রাঙামাটিতে সেনা-সেটলার দ্বারা সংঘটিত জাতিগত সাম্প্রদায়িক হামলায় রুবেল-জুনানদের সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে আর অনিককে সেটলাররা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ইন্টেরিম সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তদন্তের রিপোর্ট এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার করা হয়নি।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম করার রাজনৈতিক কালচার দেশে বেশ পুরোনো। যা থেকে ইন্টেরিম সরকার এখনো বের হতে পারেনি। প্রশ্ন করতে হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত শিশু ও আহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করতে ইন্টেরিমের এত ভয় কেন?

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, “মাইলস্টোনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। আমরা বারবার দেখেছি—দুর্নীতি, অবহেলা, সামরিকীকরণ ও ক্ষমতার দম্ভ এই রাষ্ট্রকে সাধারণ মানুষের জীবনের জন্য এক মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। পাহাড় থেকে সমতল—কোথাও নিরাপত্তা নেই, কোথাও জবাবদিহিতা নেই। কল্পনা চাকমা একসময় সতর্ক করেছিলেন, ‘পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে যে নিপীড়ন চলছে, তা একদিন সমতলেও নেমে আসবে।’ আজ তা বাস্তব। চার দশক ধরে পাহাড়ে সেনাশাসন চলেছে। যৌথ বাহিনীর অভিযান নাম দিয়ে অগণিত পাহাড়িকে গুম ও হত্যা করা হয়েছে। এখন সেই সেনাবাহিনীর নিপীড়ন সমতলেও ছড়িয়ে পড়েছে—মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীদের মৃত্যু এবং লাশের সংখ্যা লুকোনোর ষড়যন্ত্র তারই প্রমাণ।

তারা আরো বলেন, ছয় দফা দাবিতে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন নামলে সেখানেও নির্মমভাবে দমন করে ইন্টেরিমের সেনা ও পুলিশ বাহিনী। সরকার তাদের প্রশ্রয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ফলে জনগণের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে সরকার আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থাকে শক্ত করার কোনো চেষ্টা না করে বরং পুরনো, নষ্ট রাজনীতির ধারাবাহিকতাকেই বহাল রেখেছে। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গত ৫৪ বছরে যতগুলো সরকার এসেছে, সকলেই ১০% মালিকের স্বার্থ রক্ষা করেছে। কিন্তু গণতন্ত্রের সম্ভাবনা নিহিত আছে দেশের ৯০% মানুষের আহাজারির মধ্যেই। তাই জনগণের সকল অংশকে আমরা মালিক শ্রেণির সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।