মাটিরাঙ্গার গোমতি ভ্যালীর ৫০০ পাহাড়ি পরিবারের জন্য একটিও নলকুপ নেই!

0

মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি ॥ খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের গোমতি ভ্যালী। বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলের ১৭টি গ্রামে ৫০০ এর অধিক পরিবারের আনুমানিক ২ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু নির্মম সত্য হলো ডিজিটাল যুগের এই বাংলাদেশে তাদের জন্য নেই বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য একটিও নলকুপ!

কিনারঞ্জন কার্বারী পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বামে গোমতী ছড়া
# কিনারঞ্জন কার্বারী পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বামে গোমতী ছড়া।

সেই আদ্যিকাল থেকে এই গ্রামের জনগণ ছড়া ঝিরি কুয়ার পানি পান করে তাদের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসছেন। এখনো তাদের সেই কুয়া ঝিরি ছড়া ছড়ির পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সংস্থান করার জন্য সরকার ও দেশী বিদেশী নানা ধরনের বেসরকারী সংস্থা ও এনজিও বিভিন্ন সময় নানা ধরনের উদ্যোগ নিলেও কী কারণে এই গোমতী ভ্যালী এলাকার মানুষজন এখনো একটি নলকুপ পাওয়ারও উপযুক্ত হতে পারেননি তা তারা জানেন না।

গোমতী ভ্যালী মাটিরাঙ্গা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২৫/৩০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। মূলত জুম চাষ নির্ভর এই এলাকার জনগণ প্রায় ২/৩ ঘন্টা পায়ে হেঁটে পাহাড় ডিঙিয়ে পাশের খাগড়াছড়ির ভেইবোনছড়া বাজারে অথবা মাটিরাঙ্গার রামশিরা অথবা গোমতি বাজারে তাদের উৎপাদিত জিনিষপত্র বেচে জীবন নির্বাহ করেন।

অপূর্ণ মহাজন কার্বারী পাড়ার বর্তমান কার্বারী কিনারঞ্জন ত্রিপুরা জানালেন, আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের জন্য একটিও নলকুপ নেই। আমরা ছড়া ছড়ি ঝিরি থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে খাই। আমাদের গ্রাম দিয়ে ওয়াকমা তৈ কুলুক, বামে গোমতি, ওয়াতলক তৈ সা, দেম্পল তৈ সা ইত্যাদি ছড়া ছড়ি বয়ে গেছে। এই ছড়া ছড়ি থেকেই আমরা পানি সংগ্রহ করে পান করি। ঝড়বৃষ্টি আসলে ছড়া ছড়ির পানি ময়লা হয়ে গেলে পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত পানির জন্য আমাদের দু’  একদিন অপেক্ষা করতে হয়।

ওয়াকমা তৈ কুলুক ছড়া
# ওয়াকমা তৈ কুলুক ছড়া।

সম্প্রতি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বামে গোমতি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুমুইলুং ত্রিপুরা জানালেন, মাঝেমাঝেই এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এখান থেকে কাছের আমতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় দেড় ঘন্টার পথ। সেখানেও ভাল মানের ডাক্তার বসেন না। এলাকার মানুষজন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন নন বিধায় নানা অসুখ বিসুখে তারা কবিরাজি বনাজি অথবা ‘দালিবাজা’ (এনিম্যাল সেক্রিফাইস) ও প্রকৃতির দয়ার উপর নির্ভর করে থাকেন।

৮ নং আমতলী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার জলক্ক ভুষই ত্রিপুরা জানালেন, গোমতি এলাকা পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে ৬০/৭০ ফুট গভীরের সাধারণ অগভীর নলকুপ বসানো হলে পানি পাওয়া যায় না। তিনি জানালেন, এখানকার এলাকাবাসীকে নিরাপদ পানির সুবিধা দিতে হলে হয় রিংযুক্ত কুপ খনন করতে হবে অথবা বোরিং করে পাহাড়ি মাটি কেটে গভীর নলকুপ বসাতে হবে। তিনি খুব আক্ষেপ করে জানালেন, কিন্তু কোন সরকার ও এনজিও এবং বেসরকারী সংস্থা এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে লক্ষ টাকা খরচ করে এখানে নলকুপ বসানোর উদ্যোগ নেয়নি।

অপূর্ণ কার্বারী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
# অপূর্ণ কার্বারী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এবারের নির্বাচনে বিজয়ী একই ওয়ার্ডের মেম্বার হিন্দুরঞ্জন ত্রিপুরা (এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেটের মাধ্যমে মেম্বার হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়নি) জানালেন, তিনি আগামীতে এই এলাকায় জনগণের নিরাপদ পানি পান করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য গভীর নলকুপ বা রিংযুক্ত নলকুপ বসানোর জন্য নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করবেন। তিনি সরকারী বেসরকারী সংস্থা ও এনজিওর প্রতি এই এলাকায় নলকুপ বসানোর উদ্যোগ নেয়ার জন্য দাবি করেছেন।

গোমতী ভ্যালীর অন্তর্ভুক্ত ৭ নং ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার তৈবুরঞ্জন ত্রিপুরা ও ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নিলয় ত্রিপুরার সাথে কথা হলে তারাও এ প্রতিবেদককে জানালেন যে, তাদের এলাকায়ও কোন নলকুপ নেই। তারাও তাদের ওয়ার্ডে নলকুপ বসানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

গোমতি ভ্যালীর ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত গ্রামগুলো হল গলা ফা পাড়া, বিরাশি মুড়া, গলা সি ফা, নতুন পাড়া, উত্তর রাজা পাড়া, দক্ষিণ রাজা পাড়া, অপূর্ণ মহাজন পাড়া, সর্বসিদ্ধি পাড়া। ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত গ্রামগুলো হল ময়দা ছড়া, নারিকেল পাড়া, কমলা বাগান, বিশ্বরাম কার্বারী পাড়া। ৮ নং ওয়ার্ডের গ্রামের মধ্যে রয়েছে শম্ভু কার্বারী পাড়া, কামিনী পাড়া, অনন্ত কার্বারী পাড়া, হেডম্যান পাড়া, শৈল কার্বারী পাড়া।
——————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More