মাটিরাঙ্গায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সম্মেলন বানচালের চেষ্টা: তিন নেতাকে গ্রেফতার
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় আজ ৩ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সম্মেলন সেনাবাহিনী বানচালের চেষ্টা চালিয়েছে এবং সংগঠনের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে বলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক রেমিন চাকমার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় সম্মেলন বানচালের লক্ষ্যেমাটিরাঙ্গা জোনের সেনা সদস্যরা গভীর রাত থেকে টহল দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং সকাল ৭টার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের টিএন্ডটি‘র পার্শ্ববর্তী বাবু পাড়ার টিলা পাড়া থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো মারমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নিকোলাস চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক আপ্রু মারমাকে গ্রেফতার করে।পরে সকাল ১০টার দিকে তাদেরকে মাটিরাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়।তারা তিন জনই গত কিছুদিন আগে থেকে সম্মেলন সফল করতে মাটিরাঙ্গায় সাংগঠনিক কাজ চালাচ্ছিলেন এবং গতরাতে তারা টিলা পাড়ার এক বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।গ্রেফতারকৃতদের এখনো মাটিরাঙ্গা থানায় আটক রাখা হয়েছে।
বানচালের চেষ্টা সত্ত্বেও সকাল সাড়ে ১০টায় মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিপ্লব ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো ত্রিপুরা, দিঘীনালা উপজেলা শাখার সভাপতি বিধান চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উমেশ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা।
বক্তারা যুব ফোরামের তিন নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী নগ্নভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তপে করে চলেছে। যুব ফোরামের তিন নেতাকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে তা আবারো প্রমাণিত হলো। বক্তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত তিন নেতাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার একদিকে সেটলারদের দিয়ে মাটিরাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় জমি বেদখলের মাধ্যমে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনীকে দিয়ে মিছিল-মিটিং ও সভা সমাবেশের মতো গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভুলুণ্ঠিত করছে। এছাড়াও সরকার মদ, গাঁজা, হিরোইন, ডাব্বো-জুয়ার আসরে মাতাল রেখে যুব সমাজের উদীয়মান শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বক্তারা সরকার ও সেনাবাহিনীর অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম ও সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, মানিকছড়ির সিমুতাং গ্যাসত্রে থেকে উৎপাদিত গ্যাস পার্বত্যবাসীকে বঞ্চিত করে আমাদের চোখের সামনে বাইরে পাচার করা হচ্ছে। পার্বত্যবাসীকে বঞ্চিত ও অবহেলা করার বা তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচারণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ আর কী হতে পারে?
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের পরিচয় মুছে দেয়ার ল্েয সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করেছে উল্লেখ করে তারা বলেন, বাঙালি ছাড়া অপরাপর জাতিগুলো আজ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে।
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার পূর্বক সেনাশাসন অপারেশন বাতিল, ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে জাতিসত্তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও সেমুতাঙের গ্যাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পাচার বন্ধ করার জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে পঞ্চসেন ত্রিপুরাকে আহ্বায়ক ও জনি ত্রিপুরাকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।