মাটিরাঙ্গা-গুইমারা উপজেলার হেডম্যান-কার্বারিদের নিয়ে ইউপিডিএফের মতবিনিময় সভা
গুইমারা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা উপজেলার হেডম্যান-কার্বারিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ বুধবার (১৪ জুন ২০২৩) সকাল ৯টায় ইউপিডিএফের মাটিরাঙ্গা-গুইমারা ইউনিটের উদ্যোগে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে গুইমারা এলাকায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“ভূমি রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন” শ্লোগানে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফের গুইমারা উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক ঝিমিত চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক তানিমং মারমা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য রজেন্টু চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি অনিমেষ চাকমা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক জিতেন ত্রিপুরা।
মতবিনিময় সভায় যুব নেতা রজেন্টু চাকমা বলেন, ব্রিটিশ আমলে্ও পাহাড়িরা শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধের দ্বারা লক্ষাধিক পাহাড়ি বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই নিপীড়নের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়িদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার, সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি নারী নির্যাতনসহ নানা নিপীড়ন জারি রেখেছে। সরকারের এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি জাতির অস্তিত্ব ও ভূমি রক্ষার জন্য আন্দোলন বেগবান করতে যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা অনিমেষ চাকমা পাহাড়ে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন আগের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামে গ্রামে সেনা টহল, হয়রানি, অন্যায় ধরপাকড়ের কারণে পাহাড়ি জনগণ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাহাড়ে নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা বিকশিত হতে পারছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারি-খবরদারি পাশাপাশি সেটলারদের কর্তৃক্ও আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের। এমতাবস্থায় আন্দোলন ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
সঞ্চালনাকালে তানিমং মারমা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশের শাসকশ্রেণী পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে সর্বত্র সেনা শাসন বহাল রয়েছে। আশির দশক থেকে সেনা-সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে আসছে। পাহাড়িদের ওপর পরিচালিত প্রতিটি গণহত্যায় অসংখ্য পাহাড়ি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এবং অসংখ্য পাহাড়ি নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়িরা আজ পর্যন্ত নিজেদের ভূমি ফিরে পায়নি। উপরন্তু পর্যটনের নামে, সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণের নামে পাহড়িদের ভূমি বেদখল অব্যাহতভাবে বেড়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে জিতেন ত্রিপুরা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউপিডিএফ ভূমি বেদখলসহ সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। পাহাড়িদের ভূমি রক্ষার সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। সরকার যে প্রক্রিয়ায় পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে আন্দোলন করা ছাড়া টিকে থাকার কোন বিকল্প নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ গুইমারা উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক জিমিত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। প্রকাশ্য মিছিল সমাবেশে সেনা প্রশাসন বাধা প্রদান করে থাকে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল প্রকট আকার ধারণ করেছে। কখনো উন্নয়নের নামে, কখনো সেটলারদের লেলিয়ে দিয়ে, কখনো পর্যটনের নামে, কখনো সেনা ক্যাম্প স্থাপনের নামে প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। উচ্ছেদ করা হচ্ছে পাহাড়িদের। সীমান্তে রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গত কিছুদিন আগে মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি জুমচাষীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন ভূমি ছাড়া একটি জাতি টিকে থাকতে পারে না। তাই নিজেদের ভূমি নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য পাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সবাইকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় এলাকার হেডম্যান কার্বারীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন ও স্ব স্ব মতামত প্রদান করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন