মানিকছড়ি ছাত্রলীগের নেতা এখন সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী

0

গত ১ সেপ্টেম্বর রামগড়ের নাকাপা বাজার থেকে মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পী ও সুলেন চাকমা’র নেতৃত্বে অস্ত্রের মুখে বাসনা মোহন চাকমাকে অপহরণের চিত্র।



মানিকছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ৫ আগস্ট ২০২৫

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পী এখন সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট একজন দুর্ধর্ষ ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী। সেনাদের ছত্রছায়ায় সে চালিয়ে যাচ্ছে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

সম্প্রতি গত ১ সেপেম্বর ২০২৫ রামগড়ের নাকাপা বাজার থেকে বাসনা মোহন চাকমা নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রের মুখে অপহরণের ঘটনায় উঠে এসেছে মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পীর নাম। ঐদিন ৬ জনের একটি অস্ত্রধারী ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী দল এ অপহরণ ঘটনা ঘটায়।

বাসনা মোহন চাকমা সেদিন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে রামগড়ের যৌথখামার এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহণ শেষে গাড়িতে করে ফিরছিলেন।

উক্ত ঘটনার সময় ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পীসহ কয়েজন সন্ত্রাসী অস্ত্র তাক করে বাসনা মোহন চাকমাকে টানাহেঁচড়া করছে। পরে সন্ত্রাসীরা উপস্থিত লোকজনকে ভয় দেখাতে অস্ত্র তাক করে নানা হুমকি-ধমকি দিতেও দেখা যায় ভিডিওটিতে।

অপহরণের শিকার হওয়া বাসনা মোহন চাকমা মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যছোলা ইউনিয়নের গুজা পাড়ার বাসিন্দা। অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে এবং গুইমারা সেনা ব্রিগেডে নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। পরে সেনাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে সন্ত্রাসীরা বিকালে তাকে ছেড়ে দেয়। তার অভিযোগ, অপহরণ করে নেয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে বাপ্পী তাকে মারধর করেছে ও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।

অপহরণকারীদের মধ্যে চার জন বাঙালি ও দু’জন পাহাড়ি বলে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জনান। এদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- ১. মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পী, মানিকছড়ি; ২. মঞ্জু ইসলাম, গ্রাম- পাতাছড়া, রামগড়; ৩. সাগর বড়ুয়া, মানিকছড়ি ও ৪. সুলেন চাকমা। বাকী দু’জনের নাম (একজন বাঙালি ও একজন পাহাড়ি) পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পীর বাড়ি মানিকছড়ি উপজেলার গরু বাজার এলাকায়। তিনি বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের মানিকছড়ি উপজেলা শাখার উপ-গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বিগত ১৮.০৯.২০২৩ তারিখে তাকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলেও পরে ০৪.১২.২০২৩ তারিখে তার অব্যাহতি প্রত্যাহার করে স্ব-পদে বহাল করার কথা জানিয়ে মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জামাল হোসেন ও চলাপ্রু মারমা নিলয় সংবাদ মাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন।

চব্বিশের জুলাই গণঅভুত্থানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলে মানিকছড়ি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দিলেও মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পীসহ কয়েকজন ঠ্যাঙাড়েদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বর্তমানে তারা ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে সেনাবাহিনীর মদদে এলাকায় অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করছেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর নাকাপা বাজার থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে অস্ত্রের মুখে বাসনা মোহন চাকমাকে অপহরণ তাদের অপরাধমূলক কাজের সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত। ভুক্তভোগী তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণের কথা জানালেও সেনারা অপহরণকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীকে পুনরায় তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

এ ঘটনা ঠাঙাড়ে দুর্বৃত্তদের সাথে সেনাবাহিনীর নিবিড় সম্পর্ক স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সেনাবাহিনীর মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও ঠ্যাঙাড়েদের পক্ষে এ ধরনের সন্ত্রাসমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়া কখনই সম্ভব নয়।

এছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা বাপ্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা ব্রিগেডের সেনারা নিজেরাই দেশের আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা আসলে মুখে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বললেও, বাস্তবে নিজেরাই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদেরকে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে পরিচালিত গণ আন্দোলন দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

কিন্তু সত্য চাপা থাকে না। তাই সেনাদের মুখোশ খুলে পড়েছে।

জনগণের দাবি হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপন করতে হলে অবশ্যই সেনাবাহিনীকে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের মদতদান বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে দিয়ে গণআন্দোলন দমন বা জনগণের ওপর অত্যাচার চালানো বন্ধ করতে হবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More