মানিকছড়ি-ফটিকছড়ি সীমান্ত এলাকায় নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র তৎপরতায় জনমনে আতঙ্ক

0

বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০২৩

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বটতলী-চাইল্যাচর এলাকায় নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। এতে জনমনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উক্ত বটতলী এলাকার মো. রমজান আলী নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী কথিত ‘মগপার্টি’ নামধারী ৫ জন সন্ত্রাসীকে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ আটক করেছিল, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে রমজান আলীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যদিও তিনিও সন্ত্রাসী দলটির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।

সে সময় আটককৃত সন্ত্রাসীরাসহ নব্যমুখোশদের একটি সশস্ত্র দল রমজান আলীর বাড়িতে আস্তানা বানিয়ে জোরপূর্বকভাবে বনবিভাগের ধরুং বনবিটের বাগান সাবাড় করার কাজে মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই লৌহা কামাল ও ফটিকছড়ির উপজেলার বাবুল নামে এক ব্যক্তির ভাড়াটে হয়ে শ্রমিকদের পাহারা দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। ধরুং বনবিটের বাগান সাবাড় করা নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিএইচটি নিউজে “বনবিভাগের ধরুং বিটের বাগান সাবার করছে সেটলার-মুখোশরা, বনবিভাগ অসহায়” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল।

সেনাবাহিনী কর্তৃক উক্ত ৫ সন্ত্রাসীকে আটকের ঘটনার পরও ওই এলাকায় নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র তৎপরতা বন্ধ হয়নি, বরং আরো বেড়েছে। কিছুদিন আগে নতুন আরেকটি সশস্ত্র গ্রুপ সেখানে যোগ দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের একটি সশস্ত্র দল লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদরের পাশে জুর্গাছড়িতে এসে অবস্থান নেয়। পরে ওই সশস্ত্র দলটির একটি অংশ মানিকছড়ির তিনটহরী ইউনিয়নের ভোলাছোলা পাড়ার দক্ষিণ দিকে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের অধিনস্থ চাইল্যাচর-বটতলী এলাকায় চলে যায়। বর্তমানে ওই সশস্ত্র গ্রুপটি সেখানে অবস্থান করে পার্শ্ববর্তী মানিকছড়ি উপজলাধীন এলাকায়ও চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, কাঞ্চননগর ইউনিয়ন এলাকার কিছু বাঙালিও নব্যমুখোশদের দলে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে তিন জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- ১. মো. রমজান আলী, গ্রাম-বটতলী ২. মো. ফুল মিয়া গ্রাম-ঐ ও ৩. মো. হারিছ, গ্রাম- রাজা রাস্তা মাথা, কাঞ্চননগর ইউপি, ফটিকছড়ি।

উক্ত তিনজনের মধ্যে মো. রমজান আলী ও মো. ফুল মিয়া এক সময় বোরকা পার্টির সাথেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। বোরকারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেলে পরে তারা মুখোশদের দলে যোগ দেয়। রমজানের বাড়ি থেকেই ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ৫ সন্ত্রাসীকে আটক করেছিল। আর মো. হারিছ একজন খুনি আসামি। তার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ২০টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী হিসেবে মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই লৌহা কামাল ও ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং এলাকার সন্ত্রাসী বাবুল গংদের নাম উঠে এসেছে। তারাই এই মুখোশ সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করে ধুরুং বনবিটের বাগানটি সাবাড় করে দিচ্ছে।

বর্তমানে লৌহা কামাল ও বাবুল গংরা মুখোশ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র পাহারায় বসিয়ে ধুরুং বনবিটের বাগানে জোরপূর্বকভাবে গাছ কাটা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন তারা গাছ কেটে পাচার করছে, কিন্তু ভয়ে বনবিভাগ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। অপরদিকে, বনবিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে অবগত করার পরও লৌহা কামাল-বাবুল গং ও মুখোশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।  

স্থানীয় লোকজন ও বনবিভাগের পক্ষ থেকে অবিলম্বে গাছ পাচারকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এলাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More