মানিকছড়িতে ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Dhaka demo
ঢাকা: খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বক্রি পাড়া ও মনাদং পাড়ায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলার  কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে রবিবার (৫ জুলাই) ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখল অভিযান আবার জোরদার হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে সকাল ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপির সভাপতি থুইক্যচিং মারমা ও গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পিসিপি কর্মী রিয়েল ত্রিপুরা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন,‘ রাষ্ট্রীয় নীলনক্সা অনুযায়ী সেনা-প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় সেটলারা যেভাবে অস্ত্রের মুখে জোর জবরদস্তি করে প্রকাশ্য দিবালোকে ভূমি বেদখলের তান্ডবলীলা চালাচ্ছে, তাতে মনে হয় যেন মধ্যযুগীয় কোন বর্বর দেশে আমরা বসবাস করছি।’ সমাবেশে বক্তরা আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও বাহক’ হিসেবে নিজেদের জাহির করলেও পাহাড়ে সেনা ও সেটলার লেলিয়ে দিয়ে ভূমি বেদখল ও সাম্প্রদায়িক হামলা সংগঠিত করছে, এতে আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক মুখোশ খসে পড়েছে এবং প্রমাণিত হয়েছে এরাই সবচেয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক ‍ও সংখ্যালঘু জাতির প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ।’

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এই সেই “অসাম্প্রদায়িক” লেবাসধারী আওয়ামী সরকার যার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাহাড়ে দমনমূলক “১১ নির্দেশনা” নামক ফ্যাসিবাদী আইন জারি করেছে। মূলত ভূমি বেদখল, দমন-পীড়ন আইনী বৈধতা দিয়ে আরও অধিক হারে ভূমি বেদখল, দমন-পীড়ন জোরদার করার লক্ষ্যে এই ঘৃণ্য ফ্যাসীবাদী ১১ নির্দেশনা প্রণীত হয়েছে। যার তাৎক্ষণিক ফলাফল ধরপাকড়, ভূমি বেদখল, সভা-সমাবেশের ওপর হামলা ও বাধাদানের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মানিকছড়িতে ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এই ১১ নির্দেশনার সাথে সম্পর্কিত বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এও বলেন, ‘শুধু সেটলার লেলিয়ে দিয়ে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে তা নয়, উন্নয়নের প্রকল্পের নামে ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর স্থাপনার নামেও বর্তমানে পাহাড়ে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে।যার জাজ্জ্বল্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে রাঙ্গামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। এ ধরনের প্রকল্প স্থাপনের নিগুঢ় উদ্দেশ্য হল, উন্নয়নের নাম করে পাহাড়িদের উচ্ছেদ এবং নব্য সেটলার পুর্নবাসন করা। অন্যদিকে বাবুছড়ায় বিজিবি ও বান্দরবানে সেনা স্থাপনার নামেও ভূমি বেদখল করে পাহাড়িদের বংশপরম্পরার বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে।’

বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘বর্তমান ফ্যাসীবাদী সরকার সেনাসহ অন্যান্য সকল বাহিনী এবং সেটলারদের অপরাধী কর্মকাণ্ডকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈধতা দিয়েছে।এজন্য যতই অপরাধের মহোৎসবে লিপ্ত থাকুক, মানবধিকার লঙ্ঘন করুক না কেন, বিচার ও শাস্তি তো দূরের কথা, উল্টো তাদের প্রমোশনসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।এ কারণে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসের বিচার হয় না, বিচার হয় না তিমির বরন হত্যাকারী সেনা সদস্যদের। পক্ষান্তরে অন্যয়ের বিরুদ্ধে পাহাড়িরা ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর দমন-পীড়নের খড়গ নেমে আসে।পাহাড়িদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যদি বিষ্ফোরিত হয়ে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর এতে সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে সরকার।’

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজের অগ্রণী ব্যক্তিদের পাহাড়িদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। মানিকছড়িতে সেনা-সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখলের তীব্র নিন্দা, জড়িত সেনা-সেটলারদের শাস্তি এবং অবিলম্বে ভূমি বেদখল বন্ধের দাবি জানান।

উল্লেখ্য গত ৩ জুলাই সেনা প্রহরায় সেটলাররা মানিকছড়ি উপজেলার বক্রিপাড়া ও মনাদং পাড়ায় পাহাড়িদের জমি জোরপূর্বক বেদখলের উদ্দেশ্যে জঙ্গল পরিষ্কার করেছিল। তার প্রতিবাদে স্থানীয় ভূমি রক্ষা কমিটি ও ভিক্ষু সংঘ মানববন্ধন করলে তাতে সেনা-পুলিশ যৌথভাবে বাধা দিয়ে তা ভণ্ডুল করে দিলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর প্রতিবাদে স্থানীয় ভূমি রক্ষা কমিটি আজ মানিকছড়িতে আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালন করেছে।
—————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More