মিতালী চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে মানবাধিকার কমিশনের কাছে স্মারকলিপি পেশ

0

রাঙামাটি॥ একটি বিশেষ মহলের হেফাজত থেকে কদুকছড়ির ডুলুছড়ি গ্রামের গৃহবধূ মিতালী চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা।

গত রবিবার ২ ডিসেম্বর মিতালী চাকমার বাবা ধনমনি চাকমা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বাঞ্চিতা চাকমার কাছে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করেন।

রাঙামাটির সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর গ্রামের বাসিন্দা ধনমনি চাকমা স্মারকলিপিতে বলেন, তিনি গত ৩১ জুলাই ২০১৮ পারিবারিকভাবে কুতুকছড়ি ইউনিয়নের ডুলুছড়ি গ্রামের বাসিন্দা প্রসন্ন কুমার চাকমার কলেজ পড়ুয়া ছেলে সঞ্জীব চাকমার সাথে তার মেয়ে মিতালী চাকমার বিয়ে দেন।

কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর রাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিতালী চাকমাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বামী সঞ্জীব চাকমা, শ্বশুর প্রসন্ন কুমার চাকমা ও শ্বাশুরী সুনন্তা চাকমাসহ আরো কয়েকজনকে বিনা কারণে ও কোন অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করে বলে তিনি স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন।

তারপর থেকে তিনি তার মেয়ের খোঁজ পাচ্ছেন না বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে তার মেয়ের জামাই অর্থাৎ সঞ্জীব চাকমাকে প্রধান আসামী করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে এতে বলা হয়। অর্থাৎ মিতালী চাকমার স্বামীকেই তার (মিতালী চাকমার) অপহরণকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে উক্ত মামলা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ধনমনি চাকমা বলেন, ‘আমরা মিতালী চাকমার অভিভাবক হিসেবে পরিস্কার করে বলছি যে, মিতালী চাকমা কারো দ্বারা অপহৃত হয়নি ও বিবাহের পর স্বামী সঞ্জীব চাকমার সাথে বসবাস করে আসছিলো। যাদেরকে অপহরণ মামলায় আসামী করা হয়েছে তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ ও হয়রানির শিকার।”

স্মারকলিপিতে তিনি নিন্মোক্ত দাবি জানান; ১) মিতালী চাকমাকে উদ্ধার করে তার স্বামী সঞ্জীব চাকমার কাছে হস্তান্তর করা, ২) মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে কারান্তরীণ পরিবারের সকল সদস্যকে মুক্তি প্রদান করা, ৩) মিতালী চাকমার পিতা ধনমনি চাকমাসহ যারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন তাদের নিরাপত্তা বিধান করা এবং ৪) মিতালী চাকমাকে নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেয়া।

ধনমনি চাকমার উক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন মিতালী চাকমার মা রূপনা চাকমা, তার আপন চাচাত শ্বাশুরী বা সঞ্জীব চাকমার চাচী রেলিনা চাকমা ও রিতা চাকমা।

উল্লেখ্য, ১৭ নভেম্বর মিতালী চাকমা তার স্বামী ও শ্বশুর – শ্বাশুরীকে গ্রেফতারের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা মিতালী চাকমাকে তাদের হেফাজতে রেখে বাকীদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয় এবং মিতালী চাকমাকে তার নিজ স্বামী ও শ্বশুর শ্বাশুরীসহ বেশ কয়েকজন ইউপিডিএফ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দিতে বাধ্য করে।

শুধু তাই নয়, মামলা দেয়ার পর গত ২৩ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে মিতালী চাকমাকে দিয়ে একটি বিশেষ মহল সংবাদ সম্মেলন করায়, সেখানে দাবি করা হয় যে, সে অর্থাৎ মিতালী চাকমা ইউপিডিএফে যোগ দিতে অস্বীকার করায় তাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করা হয়েছে।

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ দিতে বাধ্য করা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা নিপীড়নের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর চাইতেও হাস্যকর ও উদ্ভট দিক হলো এই ‘মিথ্যা অপহরণ ও ধর্ষণ’ ঘটনার সাথে সচিব চাকমাসহ ইউপিডিএফ নেতাদের জড়িত করা।

পারিবারিক ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এভাবে হীন ও নীচু কাজ করা ঠিক নয় বলে তারা মনে করেন।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More