মে দিবসে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিছিল

0

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১ মে ২০২৩

মে দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে জাতয়ি মুক্তি কাউন্সিল।

মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের উদ্যোগে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক শ্রমিক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আজ ১ লা মে ২০২৩, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ) ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানার নিয়ে যোগদান করেন।

ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও নিজ সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সমাবেশে যোগদান করে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য দেলোয়ার হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা মো. আসাদুল্লাহ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি মিতু সরকার ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি জানান বাঙলাদেশ লেখক শিবির-এর সভাপতি হাসিবুর রহমান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী রূপসী চাকমা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ফয়জুল হাকিম বলেন, মে দিবস সারা দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম ও শপথের এক দিন। কাজের ঘন্টা কমানোর দাবি, সংগঠন করার অধিকারের দাবিতে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণী এই দিনটি পালন করছে।

তিনি বলেন, হাসিনা সরকার মে দিবসে শ্রমিক মালিক ঐক্যের শ্লোগান তুলে একে স্মার্ট বাংলাদেশ বলছে। যে পুঁজিবাদী মালিকেরা চরম মজুরি শোষণ করে চলেছে, যে মুনাফালোভী মালিকদের মুনাফার আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে শত শত শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে সেই শোষক শ্রেণীর সাথে শ্রমিক শ্রেণীর কোনো ঐক্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, এই সরকার শোষক মালিকশ্রেণীর সেবাদাস এক সরকার। শোষণ ও লুণ্ঠনের স্বার্থেই এই সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে এক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকার এখন শ্রমিক কর্মচারীদের সংগ্রামের হাতিয়ার ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার জন্য আইন করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করেছে। এই বিলের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চার সদস্যের শ্রমিক পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে নূন্যতম ৩২ হাজার টাকা মাসিক মজুরি হওয়া দরকার। অথচ গার্মেন্টসে মজুরি মাত্র ৮ হাজার ৩ শত টাকা। এই মজুরিতে কিভাবে একটি শ্রমিক পরিবার বাঁচবে?

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা।

তিনি বলেন, পাহাড়িদের বৈ-সা-বি উৎসবের সময় পাহাড়ি শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হয় না। ফলে তারা পরিবারের সাথে উৎসবে সামিল হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানের লামায় সংসদীয় কমিটি পরিদর্শনে গিয়ে রাবার কোম্পানির পক্ষ হয়ে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৫ একর করে জমি দেয়ার প্রস্তাব করেছে। অথচ ম্রো-ত্রিপুরাদের জমিগুলোই রাবার কোম্পানিকে লিজ দিয়ে বেদখল করে নেয়া হচ্ছে।

তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, পাহাড়ি শ্রমিকদের উৎসব ছুটি ও ভাতা প্রদান এবং মাইকেল চাকমাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, চাল ডাল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করে বাজারি শোষণে গরীব মেহনতি মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। অথচ সরকার উন্নয়নের ঢোল পিটাচ্ছে। প্রবাসী শ্রমিকদের দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। চিনিকল বন্ধ করে দেশে ব্যবসায়ীদের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই লুটেরা ব্যবসায়ীদের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করার সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণীকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

সমাবেশ মঞ্চে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে মুক্তির মঞ্চ গানের দল।

আসাদুল্লাহ বলেন, পাকিস্তানের ২২পরিবারের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসে শ্রমিকদের উপর শোষণ শত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ধনী গরীবের মধ্যে নজিরবিহীন বৈষম্য কায়েম হয়েছে। বাঙালি লুটেরারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশে দুর্নীতি লুণ্ঠনের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই লুটেরাদের উচ্ছেদ করতে হবে।

মিতু সরকার বলেন, জনগণের কণ্ঠরোধ করতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে দমন পীড়ন চালাচ্ছে। জনগণের সংগঠন ধ্বংস করতে সরকার নেতৃস্থানীয় কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার-হয়রানি করছে। ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং টিমের সদস্য মাইকেল চাকমাকে ২০১৯ সালে গুম করা হয়েছে। সরকার বিরোধী শত শত কর্মী গুমের শিকার হয়েছে। আমরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।

বক্তব্য রাখছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা

অমল ত্রিপুরা বলেন, কাজের ঘন্টা কমানোর দাবিতে শিকাগো হে মার্কেটের শ্রমিকরা ১৩৭ বছর পূর্বে আন্দোলন করেছিলেন, সেই থেকে ৮ ঘন্টার বেশী দৈনিক কাজ করা নিষিদ্ধ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের শ্রমিকদেরকে এখনো দৈনিক ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা কাজ করানো হয়।

তিনি বান্দরবানের লামায় ম্রো জাতিসত্তাকে নিজ বংশপরম্পরাগত জমি থেকে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানান।

বক্তব্যের মাঝে মাঝে মঞ্চে মে দিবসের গণসঙ্গীত পরিবেশন করে মুক্তির মঞ্চ গানের দল। এতে হেমন্ত দাসের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন টিপু সুলতান, আকাশ ডোম, মাসুক কাওয়াল, রাতুল অরণ্য, মো. হোসেনসহ অন্যান্য শিল্পীরা।

সমাবেশ শেষে শ্লোগান সহকারে এক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।

সমাবেশ শেষে মিছিল বের করা হয়।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More