রাঙামাটিতে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

0


ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

রাঙামাটির কাউখালীতে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

রবিবার (১৫ জুন ২০২৫) সংগঠনটির পক্ষে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন-এর স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, গত ১২ জুন রাঙামাটির কাউখালি উপজেলায় কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত নারী সমাবেশে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য ও সহকর্মী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক অলিউর সান এবং তাঁর সহযাত্রী গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভা ও নুজিয়া হাসান রাশার ওপর সংঘটিত পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর না পেরোতেই কেবলমাত্র সমাবেশে আলোচক হিসেবে যোগ দেওয়ার ফলে সহিংস হামলার শিকার হওয়ার মতো ঘটনা আমাদের বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। এই ধরনের আক্রমণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন, যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং নাগরিক অধিকারের সংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত।

এতে বলা হয়, ভুক্তভোগীর বয়ান এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি, ২০২৫ সালের ১২ জুন বিকেলে কাউখালি থেকে চট্টগ্রামের পথে রওনা হলে, তাঁদের বহনকারী সিএনজিচালিত বাহনের পথরোধ করে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য অলিউর সামকে নারী সমাবেশে আলোচক হিসেবে যোগ দেওয়ার কারণ দেখিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হেনস্তার পাশাপাশি মোবাইল ফোন ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে সহযাত্রী এবং একই সমাবেশের আলোচক মারজিয়া প্রভা ও নুজিয়া হাসান রাশার ওপরও দুর্বৃত্তরা চড়াও হয়। হামলার পূর্বে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে করে আক্রান্তদের সিএনজির পিছু নেয় এবং হামলাকারীরা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কারো নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের পরিচয় নিশ্চিত হবার চেষ্টা করে।

হামলাকারীরা ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভুক্তভোগীরা স্থানীয় ব্যক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় পরবর্তী সময়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। হামলাকারীদের মধ্যে দুইজন স্থানীয় একটি কলেজ শাখার ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী বলে জানা গেছে। হামলার পর নিকটবর্তী কাউখালি থানায় সহযোগিতা চাওয়া হলে ঈদের ছুটি ও থানার এখতিয়ারভুক্ত সীমানা সংক্রান্ত অস্পষ্টতার কারণ দেখিয়ে সহায়তা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকার রক্ষা করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। হামলার শিকার নাগরিকের তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে স্থানীয় পুলিশের গড়িমসি দায়িত্বে অবহেলারই শামিল। হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে এবং ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে গত ১৪ জুন ঘটনার অন্যতম ভুক্তভোগী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য অলিউর সান অনলাইনে একটি সাধারণ ডায়েরির আবেদন করলেও তা এখনও গৃহীত হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিত বলা হয়, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার নিশ্চিতের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও গবেষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও নিপীড়নের চর্চা প্রত্যক্ষ করছি, যেগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতীতে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ২৯ বছর পার হলেও কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচারের বদলে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলাটি খারিজ করে দেওয়া এই নিষ্ক্রিয়তার বড় প্রমাণ। সাম্প্রতিককালের এই হামলা সেই ধারাবাহিক নিপীড়নেরই উগ্র বহিঃপ্রকাশ, যেখানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাগরিক সুরক্ষার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে আমরা প্রত্যক্ষ করছি নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলা। চিহ্নিত হামলাকারীদের জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসার বদলে হামলার ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে মতপ্রকাশের ফলে নাগরিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলাকে বৈধতা দান এবং এ ধরনের হামলাকে স্বাভাবিকীকরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সমমর্যাদায় বাঁচার অধিকার নিশ্চিতের বদলে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের প্রতি প্রবল ঘৃণা, অবহেলা ও নিপীড়ন জারি রাখা হয়েছে। ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষদের প্রতি সরকার কিংবা বাঙালি জাত্যভিমানী জাতীয়তাবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গির যে বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটেনি- স্থানীয় বাঙালি দুর্বৃত্ত কর্তৃক এই হামলা তারই স্বাক্ষর বহন করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং আর কোনো নাগরিককে যেন মত প্রকাশের জন্য কিংবা সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য এহেন হামলার শিকার হতে না হয় সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ কিছু দাবি পেশ করছে। দাবিগুলো হলো–

১. এই হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. হামলার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার তদন্ত করে দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

৩. গুম কমিশনের মাধ্যমে কল্পনা চাকমা অপহরণের পুনঃতদন্ত  করে তার জোরপূর্বক গুমের রহস্য নাগরিকদের সামনে প্রকাশ করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে মতপ্রকাশ, চলাচল ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে তার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পালনে সক্রিয় হতে হবে।

৫. মানবাধিকার ও নারী অধিকারের পক্ষে কাজ করা নাগরিক, শিক্ষক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More