রাঙামাটিতে সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর ত্রিমুখী হামলা, আহত ৫০, নিখোঁজ ৯

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট ২০২৪
রাঙামাটিতে সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর জেএসএস (সন্তু), সেনাবাহিনী ও সেটলার বাঙালি কর্তৃক তিন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট ২০২৪) বিকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দেশে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ‘ছাত্র-জনতা সংগ্রাম পরিষদ’ এর ব্যানারে রাঙামাটি শহরের জিমনেসিয়াম মাঠে বিকাল ৩ টায় উক্ত গণসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল দলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে পরিচালিত সকল গণহত্যার বিচার ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে গণসমাবেশটি আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী লোকজনের একটি অংশ নৌপথে ও আরেকটি অংশ সড়ক পথে রওনা দেয়।
প্রথম অংশটি জেলা শিল্পকলা একাডেমী এলাকায় বোটঘাটে পৌঁছলে আগে থেকে লাঠিসোটা হাতে সেখানে অবস্থান করা জেএসএস-এর লোকজন বোটগুলো পাড়ে ভেড়াতে বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে তারা বোটে থাকা লোকজনের ওপর গুলতি-ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সেখানে কয়েকজন আহত হয়। পরে তাদের আক্রমণ বন্ধ না হওয়ায় সমাবেশে যাওয়া ছাত্র-জনতা বোট থেকে নেমে তাদেরকে প্রতিরোধ করে। এতে রাজবাড়ি স’মিল এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিরোধের মুখে জেএসএস সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

শিল্পকলা একাডেমী এলাকায় বোটঘাটে জেএসএস সন্ত্রাসীরা বিল্ডিং ও উঁচু স্থান থেকে সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলতি ও ইট-পাটকেল ছুঁড়ে হামলা করে।
খবর পেয়ে পরে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। এমতাবস্থায় সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা রাজবাড়ি এলাকায় সড়কে গিয়ে পৌঁছে এবং সেখানে ব্যানার নিয়ে সমাবেশের জন্য দাঁড়ায়। দু’পক্ষকে থামাতে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও সেখানে দাঁড়িয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। কিন্তু বক্তারা কথা বলা শুরু করতে না করতেই পেছন দিক থেকে সেনাবাহিনীর আরেকটি দল এসে ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত হামলা ও লাঠিপেটা করে শুরু করে ও ধাওয়া দেয়। সেখানে আরো অনেকে আহত হন। জেএসএস ও সেনাবাহিনীর দু’দফা হামলায় সেখানে অন্তত নারীসহ ২৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা সমাবেশ করতে বাধা প্রদান করছে। ছবি: রাজবাড়ি এলাকা
অপরদিকে কুদুকছড়ি এলাকার দিক থেকে সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া লোকজনকে সেনাবাহিনী মানিকছড়িতে আটকিয়ে দেয়। এ সময় সেখানে সেটলার বাঙালিরা গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।
আর কাউখালী থেকে সমাবেশ যোগদান করতে যাওয়া লোকজনকে প্রথমে ঘাগড়া সাবজোনে গাড়িগুলো আটকিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য পরে সেখান থেকে তাদের গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়। এরপর মানিকছড়িতে পৌঁছলে কুদুকছড়ির দিক থেকে আসা লোকজনসহ সকলে মিলে রাঙামাটি শহরের উদ্দেশ্যে তারা রওনা দেয়। তাদের গাড়ি বহর বেতারকেন্দ্র এলাকায় পৌঁছলে জেএসএস সন্ত্রাসীরা সেখানে তাদেরকে বাধা প্রদান করে। সেখানে তাদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জেএসএস সন্ত্রাসীরা গাড়িতে থাকা লোকজনের ওপর হামলা চালায়। তারা গাড়ি ভাংচুর করে। এতে অন্তত ২৪ জন আহত হন। এছাড়া সেখানেও আরো ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন হলেন, ১. থুইসানু মারমা, পিতা: সাথোয়াইপ্রু মারমা, গ্রাম: বড়ইছড়ি, কাউখালি; ২. সুনেন্দু চাকমা, পিতা: প্রশান্ত চাকমা, গ্রাম: বিনয়পুর, কাউখালি; ৩. কিরণ চাকমা, পিতা: হীরলাল চাকমা, গ্রাম: পেক্কোছড়ি, কাউখালি ও ৪. শান্তি রঞ্জন চাকমা, পিতা: মঙ্গল চাকমা, গ্রাম: পেক্কোছড়ি, কাউখালি।তাদেরকে জেএসএস’র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেছে কিনা বা তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।