যুগান্তর রিপোর্ট
রাঙ্গামাটিতে ‘পুকুর চুরি’

অনলাইন ডেস্ক ।। রাঙ্গামাটিতে গত অর্থবছর বাস্তবায়িত গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে নয়ছয় করা হয়েছে। এ নিয়ে উঠেছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
অনেকগুলো প্রকল্প কাগজে-কলমে তালিকায় থাকলেও বাস্তবে কাজ নেই। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ ভাগ কাজও হয়নি। কিছু কিছু প্রকল্প ৫০ ভাগের কাছাকাছি করা হলেও কাজ হয়েছে যেনতেনভাবে। সোলার হোম সিস্টেসে যেসব কাজ করা হয়েছে, সেগুলোতে সোলার প্যানেল বিতরণ ছাড়া বাকি কাজ নেই, যা সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। অনুসন্ধানে এসব তথ্যচিত্র পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার ১০ উপজেলায় টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় কোটি কোটি টাকা এবং হাজার টন খাদ্যশস্য সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়। এসব বরাদ্দে জেলার সবক’টি উপজেলায় রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও নির্মাণকাজ বাস্তবায়িত হয়। কাজ চলেছে করোনার লকডাউন সময়েও। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। লকডাউনে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে- তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা আর নানা প্রশ্ন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত অর্থবছর বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয়পর্যায়ে পাওয়া বরাদ্দে জেলার অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ হয়েছে কেবল কাগজে-কলমে। সিংহভাগ বরাদ্দের টাকা লুট হয়েছে। এতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়।
প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার তত্ত্বাবধানে এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যবস্থাপনায়।
কাজ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও প্রকল্প চেয়ারম্যানের মাধ্যমে। এসব স্তর বিশেষে প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগিতে অর্ধেক কাজও হয়নি। সিংহভাগ টাকা গেছে সংশ্লিষ্টদের পকেটে।
স্থানীয় জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের ভাষ্য ও তথ্য মতে, এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাগজে-কলমে দেখানো হলেও তালিকা ধরে প্রতিটির সুষ্ঠু তদন্তে বেশিরভাগ প্রকল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।
বেশির ভাগ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে রাঙ্গামাটি সদর ও জুরাছড়ি বাদে বাকি আট উপজেলায়।
দেখা যায়, তালিকায় জেলার ১০ উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) নন-সোলার কর্মসূচির রাঙ্গামাটি সদরে ৩টি, বাঘাইছড়িতে ৭টি এবং রাজস্থলীতে ১৫টি মিলে মোট ২৫ প্রকল্পে ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে।
সোলার হোম সিস্টেম কর্মসূচির বরাদ্দে ব্যয় হয়েছে, রাঙ্গামাটি সদরে ৭টি, রাজস্থলী ৭টি এবং নানিয়ারচরে ৭টি মিলে মোট ২১ প্রকল্পে ৪২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-খাদ্যশস্য) নন-সোলার কর্মসূচির আওতায় ব্যয় হয়েছে, বাঘাইছড়িতে ৫টি এবং নানিয়ারচরে ৭টি মিলে মোট ১২ প্রকল্পে ১৬০ দশমিক ৫৫৫ টন খাদ্যশস্য।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচিতে ব্যয় দেখানো হয়- নানিয়ারচরে দুটি, বাঘাইছড়িতে দুটি এবং রাজস্থলীতে দুটি মিলে মোট ৬ প্রকল্পে ৪৪ লাখ ১২ হাজার টাকা।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) নন-সোলার কর্মসূচির বরাদ্দে পাঁচ উপজেলা রাঙ্গামাটি সদর ১২টি, বাঘাইছড়ি ১টি, রাজস্থলী ১টি, বরকল ১টি এবং কাউখালীতে ১টি মিলে মোট ১৬ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার টাকা।
এ ছাড়া সদরে ৮টি, জুরাছড়িতে ১০টি, বাঘাইছড়ি ১টি, বরকল ২টি, কাপ্তাই ১টি, বিলাইছড়ি ১টি, রাজস্থলী ১টি এবং নানিয়ারচরে ১টি মিলে মোট ২৬ প্রকল্পে ব্যয় হয় ১১ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
এদিকে কাজের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গ এড়ানোর চেষ্টা করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, উপজেলা অফিস থেকে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
লকডাউনের সময় কাজ চলছিল। নানা কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ব্যাহত হলেও মারাত্মক দুর্নীতি কিছুই হয়নি।