রাঙ্গামাটির ঘাগড়া-চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান উষাতন চাকমা।
কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
রাঙ্গামাটি জেলার ঘাগড়া-চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থানরত একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্র-জনতা সংগ্রাম পরিষদ ও কাউখালী শান্তিপ্রিয় সচেতন নাগরিক সমাজ নামে দু’টি সংগঠন।
আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২ টায় কাউখালী উপজেলাধীন ডাবুয়া এলাকায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত সাংবাদকিদের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র-জনতা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও ফটিকছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উষাতন চাকমা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ অক্টোবর (২০২৫) থেকে ৩৫-৪০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল চৌচলাবিল, সাদেক্যা বিল, মিদিঙ্যাছড়ি, রাজখালী, বেতছড়ি, রস্যাবিলি, ধুল্যাছড়ি, বলিঘোনা ইত্যাদি এলাকায় অবস্থান ও বিচরণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সন্ত্রাসী গ্রুপটির অবস্থান ঘাগড়ার চাম্পাতলি সেনা ক্যাম্প থেকে মাত্র ৪-৫ মিনিটের দূরত্বে বলে তিনি জানান এবং বলেন, ‘এলাকায় সশস্ত্র গ্রুপটির অবস্থানের কারণে পুরো কাউখালী উপজেলায় ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’
উক্ত সন্ত্রাসী দলটি ওই এলাকায় নিজস্ব প্রশাসন কায়েম করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে, লোকজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে ও ফোন ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, লোকজনকে সকালে ও বিকালের খানাপিনা সরবরাহ করতে বাধ্য করছে, গাছের গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে এবং লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। চাঁদা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তারা বেতছড়ির ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

উষাতন চাকমা বলেন, ‘উক্ত সন্ত্রাসী গ্রুপটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গত ১৬ নভেম্বর এলাকাবাসী কাউখালী সদরে বিশাল সমাবেশ করেছে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া একই বিষয়ে এলাকাবাসী লিফলেট প্রচার ও বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিং করেছে। কিন্তু তারপরও প্রশাসন নির্বিকার রয়েছে এবং সন্ত্রাসীরা একই স্থানে অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, তারা সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ডেকে ও ফোনে হুমকি দিচ্ছে এবং মোটা অংকের জরিমানা আদায় করছে।’
নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ হলো এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করে শান্তি বজায় রাখা। এজন্য তারা প্রায় সময় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাহাড়ের অন্দরে কন্দরে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু ঘাগড়া-চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থানরত এত বড় একটি সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে কোন রহস্যজনক কারণে তারা অভিযান পরিচালনা করছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে এলাকার জনগণের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে। উক্ত সন্ত্রাসী দলটির সাথে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের কোন গোপন সমঝোতা রয়েছে কী না সে বিষয়ে সন্দেহ গভীর হচ্ছে।’
নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ‘নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতার’ অভিযোগ তুলে উষাতন চাকমা বলেন, ‘কাউখালী এলাকার জনগণ শান্তিতে থাকতে চায়। অথচ সন্ত্রাসীদের অবস্থানের কারণে জনমনে যে ভয়, আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তা দূর করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।’

সাংবাদিকরা উক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দলগত পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের দক্ষিণ দিক থেকে সেখানে এসেছে। আজ সকালে তারা চৌচলাবিল গ্রামে প্রতি গৃহস্থ থেকে তাদেরকে ২ কেজি করে চাল দিতে বাধ্য করেছে।’
যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে উষাতন চাকমা বলেন, যদি তাই হয়, তাহলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
উষাতন চাকমা সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে স্পষ্টভাবে দু’টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-
১। ঘাগড়া-চট্টগ্রাম সীমান্তে অবস্থানরত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটির বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পের ৪-৫ মিনিটের দূরত্বে কীভাবে এত বড় একটি সন্ত্রাসী দল অবস্থান করতে পারে এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রশাসনের কোন গাফিলতি কিংবা সন্ত্রাসীদের সাথে কোন গোপন সমঝোতা আছে কীনা তা তদন্ত করতে হবে এবং এতে কারোর দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অংচাজাই মারমা, চাথুইমং মারমাসহ উক্ত দুই সংগঠনের ১৬ জন নেতাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
রাঙ্গামাটি থেকে এসে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
