রামগড়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

0

রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫ 

৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও সংগঠনের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)।

জান দেবো, তবুও মান দেবো না; সারাদেশে অব্যাহত নারী শিশু ধর্ষণ বন্ধ কর” এই শ্লোগানে এবং “পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় অস্তিত্ব, বাস্তুভিটা ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থেএইচডব্লিউএফ’র পতাকাতলে সমবেত হোন” এই আহ্বানে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

আজ সোমবার (৩ মার্চ ২০২৫) সকাল ১১ টায় রামগড় কলেজ গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শ্লোগানে শ্লোগানে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রামগড় সদরের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য পাদদেশে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সদস্য দয়া চাকমা’র সভাপতিত্বে ও খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা সভাপতি নিকি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি তৈমাং ত্রিপুরা। এছাড়া এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা কলেজের ছাত্র বাহাদুর ত্রিপুরা।

সমাবেশে এইচডব্লিউএফ নেত্রী নিকি চাকমা আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠা বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন লড়াই সংগ্রামে অবিচল আছে এবং থাকবে। পাহাড়ের নারী সমাজ নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।


তিনি আরো বলেন, বর্তমানে নারীদের কোন নিরাপত্তা নেই। আমাদের পাহাড়ি নারীরা অন্যায়-অত্যাচারের শিকার, ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।

তিনি পাহাড়ে বিভিন্ন নারী নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, শুধু পাহাড়ে নয়, আজকে সমতলেও ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুব নেতা বরুণ চাকমা বলেন, আজকের এই সমাবেশ এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, গুমসহ এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, এই দেশে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে সে ঘটনার কোন বিচার হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার নামে যারা নিয়োজিত সেই নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অনেক নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১৯৯৬ সালে লে. ফেরদৌস কর্তৃক যে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল আজ পর্যন্ত আমরা কল্পনা চাকমার হদিস পাইনি। উল্টো লে. ফেরদৌসকে এই ঘটনা থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে এই রাষ্ট্র।

বরুণ চাকমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আজকে এখানে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির অপতৎপরতা চালাচ্ছে। রামগড়, নান্যাচরসহ বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কখন কি ঘটে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

তিনি বলেন, চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ‌‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ নাম দেওয়া হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এখনো সামরিক শাসন থেকে মুক্ত হতে পারেনি। পাহাড়ি জনগণ এখনো জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বরুণ চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন সরকারের শাসন দেখেছি। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই পাহাড়িদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে।

এক সময় পাহাড়িরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যাগরিষ্ট ছিল উল্লেখ করে বরুণ চাকমা বলেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কারণ আজকে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছি। তিনি জাতি ধ্বংসের রাষ্ট্রীয় নীলনক্সার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদেরকে ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হবে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতন বন্ধ করা এবং অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা এত লাঞ্ছিত, বঞ্চিত কেন? তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন যতক্ষণ বন্ধ হবে না ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন করতে হবে।

তিনি নিপীড়ন-নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে নিতে নারীসমাজসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে দয়াসোনা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন বেড়ে চলেছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি নারীদের রাজনৈতিক অধিকারসহ সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সারাদেশে অব্যাহত নারী-শিশু ধর্ষণ বন্ধ করা, অন্যায়ভাবে ভূমি বেদখল বন্ধ করা এবং কল্পনা চাকমা অপহরণে জড়িত লে. ফেরদৌসসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের ৮ই মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)। এ দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবসও। গঠনের পর থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নারী নির্যাতনসহ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৮ মার্চ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছর পূর্ণ হবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More