রামগড়ে সেটলার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
গত ১৭ এপ্রিল ২০১১ রামগড় ও মানিকছড়িতে সেটলার হামলায় তিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে খাগড়াছড়ি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটি৷ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় এতদিন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ২০এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাবার পথে মাটিরাঙ্গায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী বাধা দিয়ে ত্রাণ বহরকে ফিরিয়ে দেয়। এরপর ২৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসন থেকে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল ২৭ এপ্রিল বুধবার এ ত্রাণ সামগ্রীগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হয়।
রামগড়ের উত্তর শনখোলা পাড়া সহ ৫টি গ্রামে সেটলার কর্তৃক অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৩ পরিবার ও লুটপাটের শিকার ১৪-১৫ পরিবারের জন্য পৌঁছে দেয়া ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল-চাল ১৩৫ বস্তা, কাপড়-চোপড় ৮৮ বস্তা, হাড়ি-পাতিল ১৬ বস্তা, বিশেষ প্যাকেট(চাল ১৫ কেজি, মশারী ১টি, লুঙ্গি ১টি, থামি ১টি, আলু ২ কেজি, লবণ ১ কেজি, সুয়াবিন তৈল আধা লিটার, জরুরী ঔষধপত্র) ৮৩ বস্তা। এসব ত্রাণ সামগ্রীগুলো উত্তর শনখোলা পাড়া ত্রাণ কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। এছাড়া মানিকছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত ১১পরিবারের জন্য চাল ১১ বস্তা, কাপড়-চোপড় ৪ বস্তা, হাড়ি-পাতিল ৩ বস্তা ও বিশেষ প্যাকেট ১১বস্তা মানিকছড়ি ত্রাণ গ্রহণ ও বিতরণ কমিটির নিকট জমা দেয়া হয়। রামগড়ের উত্তর শনখোলা পাড়ায় ত্রাণ গ্রহণ ও বিতরণ কমিটির পক্ষে গণপাল চাকমা ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং মানকছড়ি ত্রাণ গ্রহণ ও বিতরণ কমিটির পক্ষে উদ্রাসাইন মারমা ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দরা উক্ত ত্রাণ সামগ্রীগুলো গ্রহণ করেন।
এছাড়াও ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির পক্ষ থেকে ঘটনার সময় বড় পিলাক থেকে নিহত ৩ বাঙালি পরিবারের জন্য চাল, কাপড়-চোপড়ও হাড়ি-পাতিলবিতরণ করা হয়।
ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির আহ্বায়ক বিনোদ বিহারী চাকমা, সদস্য সচিব মিলন দেওয়ান মনাঙ, ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির সদস্য রবি শংকর তালুকদার, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রভাকর চাকমা, অর্থ সম্পাদক সুকৃতি জীবন চাকমা, সাবেক পৌর কমিশনার কিরণ মারমা, সমাজ কর্মী মঞ্জুলাল দেওয়ান ও ঠিকাদার প্রদীপ কুমার চাকমা৷ এছাড়া দীপন চাকমার নেতৃত্বে ৭ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দলও ছিল।
ত্রাণ টিমটি স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবন থেকে সকাল ৯টায় রওনা দেয়৷ যাবার পথে খাগড়াছড়ির জিরোমাইলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ত্রাণের গাড়ি বহর আটকিয়ে চেক করে৷ তারা ত্রাণের কিছু বস্তাও খুলে ফেলে এবং চেক করে দেখে৷ সেখানে প্রায় ১ ঘন্টার মত আটকিয়ে রেখে হয়রানি করা হয়৷ তারপর জালিয়া পাড়ার পুলিশ ফাঁড়িতে আধা ঘন্টারও বেশি আটকিয়ে রাখা হয়৷ ফলে তিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছতে দেরী হয়ে যায়।
ত্রাণ বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতি থাকার পরও পুলিশ ও সেনাবাহিনী কর্তৃক এভাবে হয়রানি করায় ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব যথাক্রমে বিনোদ বিহারী চাকমা ও মিলন দেওয়ান মনাঙ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এভাবে হয়রানি বন্ধ করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।