লংগদু গণহত্যার ৩৪ বছর উপলক্ষে চট্টগ্রামে পিসিপির আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

লংগদু গণহত্যার ৩৪ বছর উপলক্ষে চট্টগ্রামে পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে আলোচনা ও প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।

আজ ০৪ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা। এতে বক্তব্য রাখেন পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রোনাল চাকমা, মহানগর শাখা সভাপতি সোহেল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী দয়াসোনা চাকমা।

রোনাল চাকমা বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জিগির তুলে বাঙালী জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ রাষ্ট্রনেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সামরিকায়ন ও বহিরাগত সেটেলার বাঙালি পূনর্বাসন করে। পাহাড়ে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও জোরপূর্বক দেশান্তরিত করার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ক্ষমতাসীন সরকারগুলো ‘মানুষ নয়,মাটি চাই’ নীতি এবং কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত করে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা। গণহত্যা সংঘটিত করে, ‘শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নের’ বুলি আওড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান হবে না। এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

সোহেল চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠী আশি-নব্বই দশকে সরাসরি গণহত্যা চালিয়ে পাহাড়ি নির্মূলের কর্মসূচি নিলেও বর্তমানে অতি সূচারুভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে পাহাড়ের তরুণ প্রজন্মকে প্রতিবাদ বিমুখ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাঁরা সুপরিকল্পিতভাবে ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতির মাধ্যমে জাতিগত বিভাজন করছে। সেখান থেকে পাহাড়ের তরুণ প্রজন্মকে সচেতন হতে হবে এবং শাসকগোষ্ঠীর পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সম্মুখ যোদ্ধা হতে হবে।

সভাপতির বক্তব্য সুদেব চাকমা বলেন, সেনা ও সেটলার কর্তৃক লংগদুতে পাহাড়িদের উপর গণহত্যার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পরও দীর্ঘ ৩৪ বছরে এর বিচার হয়নি। শাসকগোষ্ঠী পাহাড়িদের নিজভূমি থেকে তাড়ানোর লক্ষ্যে পাহাড়িদের উপর পরিকল্পিত গণহত্যা চালিয়ে এসেছে। সম্প্রতি ০৭ এপ্রিল ২০২৩ বান্দরবানে সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনী কতৃক ০৮ নিরীহ বম গ্রামবাসীকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।

সভা থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক সংঘটিত গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও বিচারের জোর দাবিসহ বান্দরবানে ৮ নিরীহ বম গ্রামবাসী হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

আলোচনা সভা শেষে লংগদু গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর সংঘটিত গণহত্যার শিকার সকলের উদ্দেশ্য প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।

উল্লেখ্য ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে বিকাল ৪-৫ টা নাগাদ লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকার তার অফিসের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাবার আড়াই ঘন্টা পর লংগদুতে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর প্রতিশোধ মূলক হামলা শুরু হয়। অ্যমেনিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল এর মতে, এই প্রতিশোধমূলক হামলায় কম করে ৩৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশু মারা যায়। তবে এর প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে রিপোর্টে বলা হয়। আর আব্দুর রশিদ সরকারের মৃত্যুর জন্য শান্তিবাহিনীকে দায়ী করা হলেও এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর কোন কারণ খুঁজে পায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিওবা স্থানীয়দের অভিযোগ এই হত্যাকাণ্ডে ২ শতাধিক পাহাড়ি হত্যার শিকার হন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More