লংগদু গণহত্যার ৩৬ বছর উপলক্ষে চবিতে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন

0

চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৪ মে ২০২৫

লংগদু গণহত্যার ৩৬ বছর উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

আজ রবিবার (৪ মে ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

পাহাড়ি ছাত্র পরিদের চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুদর্শন চাকমার সঞ্চালায় সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চবি সংগঠক আহমেদ মুগ্ধ, রাম্রাসাইন মারমা প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা।

আহমেদ মুগ্ধ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে পাহাড় ও সমতলের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল সেটি পূরণ হয়নি । গণহত্যায় শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে লড়াইয়ে উজ্জীবিত করেছে। বম জনগোষ্ঠী জাতিগত নিপীড়ন ও নিধনের শিকার। রাষ্ট্র সেনা-সেটেলারদের কাজে লাগিয়ে জাতিগত বিভাজন করে তাঁদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন করছে। বম নারী-শিশুরা এখনো কারগারে আটক রয়েছে।

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, বম জনগোষ্ঠীর শিশুরা এখনো কারাগারে, তাঁরা এখনো শরনার্থী। তাঁদের কন্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে। এরকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে।

রাম্রা সাইন মারমা বলেন, গণহত্যা পুরোপুরি রাজনৈতিক। পাহাড়িদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিকীকরণ করা হচ্ছে, তাঁদের জায়গা জমি বেদখল করা হচ্ছে, নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ হিসেবে গণহত্যা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কারা এই হত্যাকাণ্ড করেছে সেটা আমরা জানি৷ পাহাড়ে আগেও কারা গণহত্যা করেছে সেটা আমরা জানি। কাউখালীর কলমপতি থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে গুম, খুনের সাথে রাষ্ট্র জড়িত। কল্পনা অপহরণের সাথে কারা জড়িত সবাই জানে।

তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পাহাড়ের জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ এর পরে পাহাড়িদের সন্ত্রাসী-বিচ্ছিনতাবাদী বলা হচ্ছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলে পাহাড়িদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। বম জাতিগোষ্ঠীর একটা অংশকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে পুরো বম জাতিকে নিধনের প্রক্রিয়া চলছে।

সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে লংগদুতে যে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক গণহত্যা সংঘটিত হয় সেখানে কতজন নিহত হয়েছে সঠিক কোন তথ্য নেই। কারণ গণহত্যার পরে অনেক লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। গনহত্যার শ্বেতপত্র সরকার প্রকাশ করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীতে ডজনের অধিক গণহত্যার কোনটির সঠিক তদন্ত ও শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়নি। অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরাসরি গণহত্যা হলেও বর্তমানে পদ্ধতি বদল হয়েছে। এখন যাঁরা অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, ভবিষ্যতে যাঁরা করবে তাঁদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে। পাহাড়ে মাদক-জুয়ার মাধ্যমেও রাষ্ট্র মানসিক বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরি করছে।

তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২ হাজারের অধিক নিহত ও হাজার-হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গণহত্যার এখনো বিচার করতে পারেনি। পাহাড়-সমতলে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে। লংগদু গণহত্যার ৩ যুগ পেরিয়ে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা গণহত্যাকারীদের ভুলে যায়নি। নতুন প্রজন্ম গণহত্যার মতো অতীতের দুঃসহ স্মৃতিকে ভুলে যায়নি, ভুলে যাওয়াও চলবে না।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More