লংগুদু হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে পিসিপি, যুব ফোরাম ও এইচডব্লিউএফ’র সংহতি সমাবেশ

0

19022109_1431974846892970_1830901926_n

চট্টগ্রাম: রাঙামাটির লংগুদুতে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং হামলাকারী সেনা-সেটলারদের গ্রেফতার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখা। এতে লংগুদুর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনও অংশগ্রহণ করেন। তারা ‘আমাদের কী অপরাধ? কেন আমাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়া হলো? হামলাকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের মদদদাতাদের শাস্তি চাই’ লেখা ব্যানার নিয়ে সংহতি সমাবেশে যোগ দেন।

আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল ৩:৪৫ টায় চট্টগ্রাম নগরীর শহীদ মিনানের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডিসি হিল হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

19113267_1431974553559666_399551633_n

সমাবেশে বক্তারা বলেন, লংগুদুতে পাহাড়ি গ্রামে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম লংগুদুতে গিয়ে পাহাড়িদের চিরস্থায়ী ভুমি বন্দোবস্তের যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মূলত আইওয়াশ এবং লোকদেখানো ছাড়া কিছুই নয়। আশি দশকের মতো পাহাড়ে হামলা করে সেনাবাহিনী এবং সরকার আর পার পাবে না। এখন সারা বাংলাদেশের মানূষসহ বিশ্ববাসী পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়েনের কথা জেনে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে রাখলে বাংলাদেশ কখনো শান্তিতে থাকতে পারবে না।19047882_1431974620226326_378562653_n

বক্তারা আরো বলেন, সমতলে হাজার হাজার একর সরকারি খাস জমি সরকারী ও বেসরকারী দলের প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা বেদখল করে রেখেছে। ঐসব ভুমিকে দখলমুক্ত করে সেটলারদের সেখানে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসিত করলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাসহ জাতিগত সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।

বক্তারা বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় অঘোষিত সেনাশাসন জারি রেখে সেনাবাহিনীকে দিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় শাসন-শোষণ চালানো হচ্ছে। পাহাড় এবং সমতলের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার এবং শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের সংবিধান ও শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা ছাড়া এদেশের মেহনতি  এবং নিপীড়িত মানুষের  মুক্তিসম্ভব নয়। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

সংহতি সমাবেশে লংগুদু হতে আগত ভিকটিম জ্যোতিষ কান্তি চাকমা মর্মস্পর্শী ভাষায় আবেগ তাড়িত হয়ে বলেন, সেদিন পাহাড়িরা সেটলারদের হামলার আশঙ্কায় প্রশাসনের নিকট নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। লংগুদু জোন কমান্ডার পাহাড়িদেরকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন যে, কিছুই হবে না! সেদিন জোন কমান্ডার আরো বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী এখানে আছে কেন? মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে সেনাবাহিনীর কাজ’-এহেন বক্তব্য দেয়ার পর আমরা লক্ষ্য করলাম যে, লংগুদুবাসীর ব্যানারে সেটলার বাঙালিরা যে সমাবেশটি করেছিল, উক্ত সমাবেশে ওই জোন কমা-ার স্বয়ং উপস্থিত থেকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়েছেন! আরো অবাক হলাম যে, থানার ওসিও উপস্থিত থেকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন।19046606_427780704270464_2081837399_n

লংগুদু থানার ৭ নং ইউপি সদস্য অজয় বিকাশ চাকমা সমাবেশে ঘোষণা করেন যে, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিশেষত জোন কমান্ডার আব্দুল আলিম চৌধুরীর বিচার যতদিন না হবে, ততদিন সরকার প্রদত্ত কোন ত্রাণ সামগ্রী গ্রহন করা হবে না।

সংহতি সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নগর শাখার সহ-সভাপতি উশৈচিং চাক (শুভ) এর সভাপতিত্বে এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রুপন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক মন্টি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রগতিশীল ডক্টরস ফোরামের সমন্বয়ক ডা: সুশান্ত বড়ুয়া, গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের (পূর্বাঞ্চল-৩) সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূলন লাল ভৌমিক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আমীর উদ্দিন। এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More