লক্ষীছড়িতে সেনা অভিযানের নামে হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

0


লক্ষীছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫

খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নের হুদুকছড়ি গ্রামে সেনা অপারেশন ও বাড়িঘরে তল্লাশির নামে নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি, লুটপাট ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ, লক্ষীছড়ি উপজেলা শাখা।

আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট ২০২৫), সকাল সাড়ে ১১টায় হুদুকছড়ি বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন লক্ষীছড়ি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি মারমা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি নিক্সন চাকমা, ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমা, যুবনেতা ক্যামরন দেওয়ান ও এলাকার প্রতিনিধি উথান মারমা।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল (১৮ আগস্ট) ভোররাত ২টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসী কায়দায় হুদুকছড়ি গ্রামে ঢুকে বিনা অনুমতিতে অন্তত পাঁচ গ্রামবাসীর বাড়িতে হয়রানিমূল তল্লাশি চালিয়েছে এবং এলাকার সাধারণ জনগণকে হয়রানি করেছে। এ সময় সেনারা বাড়িঘরের জিনিসপত্র তছনছসহ টাকা-পয়সা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।


বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অভিযানের নামে নিপীড়ন-নির্যাতন, হয়রানি, ধরপাকড় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতির মধ্যে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে শিউলি মারমা বলেন, সেনা অপারেশনের কারণে এলাকার জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তারা বাড়িতে, ক্ষেতে খামারে কাজে যেতে পারছে না। স্কুলে ছেলেমেয়েরা ঠিকমত ক্লাশ করতে পারছে না। কারণ সেনা সদস্যরা স্কুল ঘর দখল করে থাকে অপারেশনের সময়। বাড়ির মেয়েরা সব সময় ভয় ও আতঙ্কে থাকে। অতীতে অপারেশন ও টহলের সময় মেয়েদের অপহরণ, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, অভিযানের নামে সেনারা সাধারণ জনগণকে হয়রানি ও লুটপাট চালাচ্ছে। এলাকার জনগণ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। কিন্তু সেনারা সেই অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, সেনারা আসল সন্ত্রাসীদের আড়াল করে রাখে, তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজি চালানো হয়। অথচ তারা নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালায়।


সমাবেশে থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো:

১) অবিলম্বে অপারশনের নামে তল্লাশি, লুটপাট, হয়রানি, ও বেআইনী গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। ২) যেসব টাকা ও দলিলপত্র লুট করে নেয়া হয়েছে সেগুলো ফেরত দিতে হবে।

৩) প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে ও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান বন্ধ করতে হবে। ৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।

৫) সমতলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও গণতন্ত্র দিতে হবে।

সমাবেশে অংশ নিয়ে বাড়ি তল্লাশি শিকার পরিবারের এক নারী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “গতকাল ভোরে আমি টয়লেটে যাই। সেখান থেকে শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি আর্মিরা আসছে। তখন আর্মিরা আমাকে বন্দুক তাক করে ‘সন্ত্রাসী কই, দেখিয়ে দাও’ বলে। আমি জানিনা বলে উত্তর দিলে তারা “সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে না দিলে মেরে ফেলবো’ নতুবা জেলে দেবো’ বলে হুমকি দেয়। আমাকে বন্দুক ঠেকিয়ে রাখে। বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেয়নি। তারা আমার সন্তানদেরও বন্দুক ঠেকিয়ে সত্য কথা বলতে বলে, না হলে মেরে ফেলবে- এমন ভয় দেখায়। আমার সন্তানদের কাছ থেকেও সেনারা অস্ত্র খোঁজে। তল্লাশি চালিয়ে বাড়ির সকল জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। তারা আমাদের মুরগির ঘরটিও ভেঙে দেয়, এতে অনেক মুরগীর ডানা, পা ভেঙে যায়। তিনি এ নিপীড়ন ও হয়রানি ঘটনার বিচার দাবি করেন।

সমাবেশ শেষে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কুদুকছড়ি বাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More