লক্ষ্মীছড়িতে ইউপিডিএফ নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা
লক্ষ্মীছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (২ অক্টোবর ২০২৩) ইউপিডিএফ’র লক্ষ্মীছড়ি ইউনিট এ স্মরণসভার আয়োজন করে।

স্মরণসভার পূর্বে সকাল ৯টায় শহীদ রুইখই মারমা স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইউপিডিএফ-এর পক্ষে রতন বসু, জিরান ও বিধুর চাকমা, শহীদ পরিবারের পক্ষে শহীদ রুইখই মারমার সহধর্মিনী রিতা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য নারী সংঘ নেতৃবৃন্দ এবং হুদুকছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।


এরপর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শুরুতে শহীদ কেন্দ্রীয় নেতা রুইখই মারমার প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
“তিনিই শ্রেষ্ট যিনি জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেন” এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ’র লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ইউনিটের সিনিয়র সংগঠক বিধুর চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক বিবেক চাকমা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ সংগঠক রতন বসু ও জিরান চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ক্যামরণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক প্রাঞ্জল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মন্ডিরা তাঁতি, পিসিপি’র লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুপায়ন চাকমা প্রমুখ। এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য বিনোদ মুন্ডা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এলি চাকমা, শহীদ রুইখই মারমা সহধর্মিণী রিতা মারমা।
রতন বসু তার বক্তব্যে বলেন, রুইখই মারমা সম্পর্কে আমার আপন মামা। পার্টিতে দীর্ঘদিন তাঁর সাথে থেকে কাজ করেছিলাম। তার কাছ থেকে অনেক শিক্ষাও পেয়েছি। তিনি পার্টি ও জনগণের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে গেছেন। জুম্ম জনগণের অধিকার অদায়ে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। শাসকগোষ্ঠী নির্যাতন-নিপীড়নে ক্ষান্ত হননি। যার কারণে শাসকগোষ্ঠী তাকে হত্যা করার জন্য নানা যড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। ২০০৯ সালে আজকের এই দিনে বটতলি নামক স্থানে ঘাতকরা তাকে হত্যা করে।
তিনি আরো বলেন, ঘাতকেরা তাকে হত্যা করেছে ঠিকই, কিন্তু তার আপোষহীন চেতনার সংগ্রামকে হত্যা করতে পারেনি। সাধারণ খেটে খাওয়া ও নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মনের ভিতর তিনি এখনো জীবিত রয়েছেন। তিনি যে চেতনা লালন করেছেন সেই চেতনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো আপোষহীন লড়াই সংগ্রাম চলমান রয়েছে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, শহীদ রুইখই মারমা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আপোষহীন লড়াই সংগ্রামের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের পথ প্রদর্শক। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপোষহীন নেতা ছিলেন। শাসগোষ্ঠির অন্যায়-অবিচারের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। যার কারণে তাকে নিয়ে সরকার-শাসকশ্রেণি ভয়-ভীতির মধ্যে ছিল। আর সেজন্য তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
তারা বলেন, রুইখই মারমাকে শারীরিকভাবে হত্যা করতে পারলেও তার লালিত নৈতিক আদর্শিক চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি। তিনি যে চেতনা লালন করে গেছেন সেটার কখনো মৃত্যু নেই। তার নৈতিক চেতনা একদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত মানুষের হাসি ফোটাবে।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র লড়াকু ইউপিডিএফ-এর ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার ঠ্যাঙারে বাহিনী সৃষ্টি করে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা ষড়যন্ত্রমূলক কর্যক্রম চালাচ্ছে। কথিত সিএইচটিএনএফ তথা বোরখা পার্টিকে লেলিয়ে দিয়ে রুইখই মারমাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, একই কায়দায় নব্যমুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে মিঠুন চাকমা, তপন, এল্টন, পলাশসহ আরো বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
বক্তারা শহীদ রুইখই মারমার আদর্শিক চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অত্যাচার, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে ইউপিডিএফের পতাকাতলে সমবেত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন