লক্ষ্মীছড়িতে তিন ইউনিয়নে ইউপিডিএফ নেতা শহীদ রুইখই মারমার স্মরণ সভা

লক্ষ্মীছড়ি প্রতিনিধি ।। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার লক্ষ্মীছড়ি সদর, দুল্যাতলী ও বর্মাছড়ি ইউনিয়নে পৃথক পৃথকভাবে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হযেছে।
আজ ২ অক্টোবর ২০২১, শনিবার সকালে ইউপিডিএফের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ইউনিট এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
“তোমার মৃত্যু থাই পাহাড়ের চেয়ে ভারি, তোমায় জানাই স্যালুট” এই শ্লোগানে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল শহীদ রুইখই মারমার স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণ সভা।
লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক নিরেট চাকমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার অর্থ সম্পাদক পবিন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ প্রতিনিধি দেবেশ চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ক্যামরন চাকমা।

দুল্যাতুলি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় ইউপিডিএফ প্রতিনিধি রতন বসু সভাপতিত্বে ও সদস্য পার্টি সদস্য নিরব চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সভাপতি রুপান্ত চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মিটন চাকমা ও এলাকার প্রতিনিধি সঠিক চাকমা।
স্মরণ সভার পূর্বে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ রুইখই মারমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
স্মরণ সভার সভাপতি ইউপিডিএফ প্রতিনিধি রতন বসু রুইখই মার্মার জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন ও পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বর্মাছড়ি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক মন্টু চাকমা সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সহ-সভাপতি পাইচি মার্মা সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সদস্য সরল চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলার গণফ্রন্টের সমন্বয়ক আপ্রুসি মার্মা, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য বিনোদ মুন্ডা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য রিটন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষীছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি উৎপল চাকমা।
সভায় শহীদ রুইখই মার্মার জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন এচিং মার্মা।
একইভাবে স্মরণ সভার পূর্বে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ রুইখই মারমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, রুইখই মারমা ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে তিনি জনসংহতি সমিতিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে জেএসএস’র মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। এই গৃহযুদ্ধ অবসানের পর তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করেন। ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠিত হলে তিনি এই দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং এই পার্টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি অত্যন্ত একনিষ্টতার সাথে ভাগ্য বিড়ম্বিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত ও অধিকারহারা জনগণের অধিকার ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

২০০৯ সালের ২ অক্টোবর বর্মাছড়ির বটতলী এলাকায় সেনা মদদপুষ্ট বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। তৎসময়ে লক্ষ্মীছড়ি সেনা জোনে জোন কমাণ্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন লে. কর্ণেল শরীফুল ইসলামের সৃষ্ট ‘সিএইচটিএনএফ’ ও বোরখা পার্টি নামধারী সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
বক্তারা শহীদ রুইখই মারমার অবদান স্মরণ করে বলেন, রুইখই মারমা একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে শুরু করে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন।
তারা বলেন, সে সময় লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি ও রামগড়ে সেনা উস্কানিতে ভূমি বেদখলের মহোৎসব শুরু হলে তার বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন রুইখই মারমা। তার সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সেনাবাহিনী ও তাদের চর-এজেন্টর একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এক কথায় রুইখই মারমা অপরিসীম দায়িত্বশীলতার সাথে এলাকার জনগণের স্বার্থের পাহারা দিয়েছিলেন। যার কারণেই সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তাই রুইখই মারমার আত্মবলিদান জাতি ভুলবে না। তাঁর রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না।
স্মরণ সভায় বক্তারা ১২ বছরেও রুইখই মারমার প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শহীদ রুইখই মার্মার সহধর্মীনী ঘটনার পর লক্ষ্মীছড়ি থানায় চিহ্নিত খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ খুনিদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করে উল্টো রুইখই মার্মার আত্মীয় স্বজন, ইউপিডিএফ নেতা কর্মী ও সমর্থকদের মিথ্যাভাবে মামলায় জড়িত করেছে।
বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, খুনিরা রুইখই মার্মাকে শারিরীকভাবে হত্যা করতে পারলেও তাঁর চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি। শহীদের রক্তে সিক্ত পূর্ণশায়ত্তশাসনের লড়াই দিনে দিনে আরো জোরদার হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন