লড়াই সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান ইউপিডিএফের

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংগঠিত হয়ে ভবিষ্যত লড়াই সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার ২৭তম বার্ষিকীতে কর্মীবাহিনী ও জনগণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রদত্ত বার্তায় এই আহ্বান জানানো হয়।
* নীচে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির বার্তাটি হুবহু দেওয়া হলো:
ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার ২৭তম বার্ষিকীতে কর্মীবাহিনী ও জনগণের উদ্দেশ্যে বার্তা :
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ,
আজ ’২৬ ডিসেম্বর’ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন! ১৯৯৮ সালের এ দিনে গঠিত হয় আমাদের প্রিয় পার্টি ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
এ স্মরণীয় ক্ষণে আপনাদের জানাই প্রাণতেজোময় সংগ্রামী অভিবাদন! অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা। আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে শত্রু ও বেঈমানদের আক্রমণে গুরুতর জখম হয়ে পঙ্গুত্ববরণকারী বন্ধু সহযোদ্ধাদের জানাই আন্তরিক প্রীতি ও উষ্ণ ভালোবাসা। যারা কারাগারে অন্তরীণ, তাদের প্রতি জানাই আমাদের সহমর্মিতা।
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নানাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যারা ভূমিকা রাখছেন, তাদেরও আমরা এ মহতী দিনে শুভ সম্ভাষণ জানাই। সর্বোপরি পার্টি উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ শিরধার্য করে শত্রু বাহিনী ও জাতীয় বেঈমানদের মিলিত আক্রমণ ও অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিয়ে যারা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবিচল থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও সংগ্রামী অভিবাদন!
সংগ্রামী সাথী-বন্ধুগণ,
ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার ২৭তম বার্ষিকী এমনি এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যখন ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ’ নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত হওয়ার পরও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে পরিবেশ বিরাজ করার কথা, বাস্তবে তা নেই। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সবচে’ বেশি নাজুক। নির্বাচনে প্রধান Stakeholder (অংশীদার) ইউপিডিএফ-এর নেতা-কর্মী-সমর্থকগণ ঘরছাড়া, এলাকাছাড়া ও মামলা-হুলিয়া মাথায় নিয়ে কঠিন অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে। এখনও ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সেনা অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের সাথে সমানতালে চলছে সেনা মদদপুষ্ট চিহ্নিত গোষ্ঠীর উৎপাত। প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল ও কিয়্যঙে শিবির ফেলে সেনাবাহিনী নব্যমুখোশ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে ইউপিডিএফ-এর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হয়রানি, হেনস্থা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছে, গৃহস্থালীর সরঞ্জাম হাঁড়িপাতিল ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও মোবাইল ফোন ও অর্থও লুটপাট করেছে। কাউখালি, নাড়েইছড়ি ও পানছড়িতে একটি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত চক্রের চাঁদাবাজি-মুক্তিপণ আদায় ও সাধারণ জনগণকে হুমকি প্রদান– সবই ঘটছে দুর্নীতিগ্রস্ত একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহায়তায়।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা যে কায়দায় ইউপিডিএফ সহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে পাতানো নির্বাচনী খেলা খেলেছিল, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে তফশিল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কী না বা দেশের ভবিষ্যৎ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান পরিস্থিতি কী রূপ দাঁড়াবে, তা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা, দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা।
বিশেষ করে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরে পরেই ঢাকায় একটি আসনের প্রার্থীর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আততায়ী কর্তৃক গুলি এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাণ্ডবলীলা, ঢাকায় পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-বাদ্যযন্ত্র তছনছ, ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্মীয় অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে দীপু দাস নামে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক পোশাক শ্রমিককে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় হত্যা এবং পৈশাচিক উন্মত্ততায় তাকে পুড়িয়ে ফেলা এবং এ ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মনে ভয়-আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া – এসব ঘটনা দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে ভালো কিছু নির্দেশ করে না। এ উগ্র মব সন্ত্রাসের জোয়ারে পার্বত্য চট্টগ্রামেও বিষাক্ত ফণা তুলেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী! তাদের খোলাখুলি মদদ দিচ্ছে পাকিস্তানপন্থী একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তা। পাহাড়ে কাকে ভোট দিতে হবে, তা এরা ক্যাম্পে ডেকে জানিয়ে দিচ্ছে। ‘মহালছড়ি তাণ্ডবলীলার কসাই’ বলে খ্যাত আদালতে সাজাপ্রাপ্ত দাগি অপরাধীকে নির্বাচনে জিতানোর লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে নীলনক্সা। এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বেনোজলে বেরিয়ে আসছে পয়ঃপ্রনালীর আবর্জনা সদৃশ পাহাড়িদের মধ্যকার অচ্ছ্যুত গণদুশমন প্রতিক্রিয়াশীল ও দালালরা। অপরিণামদর্শি একশ্রেণীর তথাকথিত সমাজকর্মী জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ ধ্বংসাত্মক খেলায় শরীক হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচনে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে জিতানোর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে পার্বত্যবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংগ্রামী বন্ধুগণ,
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের শাসনকার্য পরিচালনায় কেবল ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে তা নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্পষ্টতই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পক্ষাবলম্বন করেছে। সে কারণে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর আজ বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা! দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রগতিশীল চিন্তাধারার ব্যক্তি-সংগঠন, উদারমনা চিন্তাশীল ব্যক্তি-লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই উদ্বিগ্ন। সবচে’ বেশি আতঙ্কিত ও অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীতে যদি একটি সরকার গঠিতও হয়, তাহলেও ‘পার্বত্য চুক্তি’ বাস্তবায়িত হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া বিএনপি এমন একটি দল, যে দলটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক দমন-পীড়ন চালিয়ে ও সেটলার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়িদের নিজ বাসভূমে সংখ্যালঘু ও দুর্বল করে তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল।
বিগত আটাশ বছরে ‘পার্বত্য চুক্তি’ বাস্তবায়ন হয় নি। চুক্তি সম্পাদনকারী দল আওয়ামীলীগ এক নাগাড়ে দেড় দশক ক্ষমতায় থেকেও তা বাস্তবায়ন করেনি, আগামী এক যুগেও দেশের শাসন ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ ফিরতে পারবে তার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এক কথায় ‘পার্বত্য চুক্তি’র ভবিষ্যত অনিশ্চিত, পার্বত্যবাসীর অস্তিত্ব সংকট গুরুতর হুমকির সম্মুখীন।
শাসকগোষ্ঠী জনগণের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল করার সকল ষড়যন্ত্র জারি রেখেছে। শাসকগোষ্ঠীর প্রতারণা, বেঈমানি ও জনসংহতি সমিতির রাজনৈতিক অপরিণামদর্শিতার কারণে ক্ষতি যা হবার হয়েছে। আগামীতে আর তা হতে দেয়া যাবে না। এখন উঠে দাঁড়ানোর পালা! মৃত চুক্তি নিয়ে না হুতাশ করে পড়ে থেকে আর কোন লাভ নেই।
লড়াই সংগ্রাম ছাড়া পার্বত্যবাসীর সম্মুখে ভিন্ন কোন পথ নেই।
‘আত্মশক্তিই আসল শক্তি’।
২৭তম বার্ষিকীতে আমাদের আহ্বান,
* সংগঠিত হোন, ভবিষ্যত লড়াই সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকুন!
* ইউপিডিএফ-এর নির্দেশিত পথে চলুন, বিজয় অবিশ্যম্ভাবী!
No Full autonomy, No Rest!
Long Live UPDF!
২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)
কেন্দ্রীয় কমিটি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
