দৈনিক দেশের কথার প্রতিবেদন

লামায় উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে ম্রোদের পানির উৎস ধ্বংস

0
ম্রো পাড়া। ছবি: দেশের কথা

বান্দরবান ॥ পার্বত্য বান্দরবানের লামার সরইয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তিনটি পাড়ার দেড় শতাধিক পরিবারে এখন উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে ওই তিন পাড়ার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের ব্যবহার ও খাওয়ার পানি সংগ্রহের সবগুলো উৎস ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চলাচলের রাস্তা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ওসব পাড়ার বাসিন্দারা।

স্থানীয় অধিবাসিদের অভিযোগ, মিশনারী সংস্থা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন গত কয়েক বছর ধরে ঢেঁকিছড়া ও চম্পাঝিরি ম্রো পাড়ার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পাড়ার বাসিন্দারা নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে না যাওয়ায় কৌশলে ওই দুই পাড়ার চারদিকের চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাহাড় কেটে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে পাড়ার পার্শ্ববর্তী সবগুলো ঝিরি ও ঝর্ণা। যেখান থেকে এই তিন পাড়ার বাসিন্দারা খাওয়ার এবং নিত্যদিনের ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করে জীবন নির্বাহ করে আসছে। শুধু এই দুই ম্রো পাড়া ই নয়! কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষ পার্শ্ববর্তী আরও একটি ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদেরও উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা জানান।

স্থানীয়দের ভাষ্য, কোয়ান্টাম সরইয়ের ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির জীবন বিপন্ন করে দিয়েছে। চারদিকের সব পাহাড় দখলে নেয়ার পর মধ্যখানে মাথা উঁচুকরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢেঁকিছড়া ও চম্পাঝিরি ম্রো পাড়া এখন দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মিশনারী এই সংস্থাটি চায়, ম্রোরা নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যাক। ওই দুই পাড়ার বাসিন্দাদের বিতাড়িত করতে প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এরআগে গত দু’যুগের ব্যবধানে প্রায় এক হাজার ম্রো ও ত্রিপুরা পরিবারকে উচ্ছেদ করে কোয়ান্টাম প্রায় দেড় হাজার একর ভুমি দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ১৯৯৩ সালের শুরুতে লামার এই র্দূগম পাহাড়ি এলাকায় ত্রিপুরাদের কাছ থেকে ১৫ একর পাহাড়ি ভুমি নিয়ে মেডিটেশনের নামে কার্যক্রম শুরু করে কোয়ান্টাম ফাউ-েশন। এরপর থেকে ই একের পর এক স্থানীয় দরিদ্র-হতদরিদ্র ম্রো -ত্রিপুরা ও বাঙ্গালীদের উচ্ছেদ করে আসছে। আর এসব ক্ষেত্রে আইনগত এবং প্রশাসনিক সাপোর্ট পেতে কৌশলে ব্যবহার করে সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। যার কারণে সেসময় দফায় দফায় জেলা ও উপজেলায় মানবন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি সেই ভূমি হারা পরিবারগুলো। সর্বশেষ প্রয়াত এক রাষ্ট্রদূতের লিজ নেওয়া অর্ধশত একর ভুমি দখল করে নেয় এই কোয়ান্টাম। এই জন্য তেমন কোনো জবাবদিহিতাও করতে হয়নি তাদের।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, সরইয়ের এলাকাতেই কোয়ান্টাম প্রায় দেড় হাজার একর ভুমি দখল করে নিয়েছে। আরও ভুমি দখলের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও কোয়ান্টাম ফাউণ্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক সাজ্জাদ হোসাইন প্রায় চারশ একর ভুমি তাদের দখলে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, যেহেতু পূর্বানুমতি ব্যতীত এখানে কোয়ান্টামের জায়গা কেনার কোনো সুযোগ নেই। আর জায়গা দখলের তো প্রশ্নই আসে না। প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত কোনো জায়গা দখল বা কিনে থাকে সেটা অন্যায়। ম্রো সম্প্রদায়ের পানির উৎস ধ্বংসের ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কারো পানি সংগ্রহের উৎস ধ্বংস এটা পুরোপুরি অন্যায়। অভিযোগ পেলেই আইগন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: দৈনিক দেশের কথা


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More