লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের ঘটনায় তিন সংগঠনের উদ্বেগ

0

নিজস্ব প্রতিনিধি।। বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডুলুছড়ি মৌজায় ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে একটি কোম্পানি কর্তৃক তিনটি পাহাড়ি গ্রামের ৪০০ একর জায়গা বেদখল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত তিন পাহাড়ি গণসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।

আজ রবিবার (১০ এপ্রিল ২০২২) গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আমরা স্থানীয় সূত্রে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি যে, গতকাল শনিবার (৯ এপ্রিল ২০২২) সকাল ৯টার দিকে বান্দরবানের লামা উপজেলা সরই ইউনিয়নের ডুলুছড়ি মৌজার ৪নং ওয়ার্ডের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়ায় পাহাড়িদের প্রায় ৪০০ একর ভূমি জোরপূর্বকভাবে বেদখলের জন্য ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ কোম্পানির উপ-পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ও কক্সবাজার এলাকা থেকে শ’খানেক বহিরাগত বাঙালি ও রোহিঙ্গাকে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রসহ নিয়ে এসে পাহাড়িদের লাগানো গাছপালা কেটে দেয় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে। এতে পাহাড়িরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বহিরাগতরা তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং একজন পাহাড়িকে মারতে পারলে তারা দশ লাখ টাকা পাবে বলেও উল্লেখ করে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায় বহিরাগতরা কেউ লাঠিসোটা দিয়ে পাহারা দিচ্ছে, আর কেউ জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজ করছে। কিন্তু এত কিছু হবার পরেও প্রশাসন ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ কোম্পানি নয়, এর আগে সিকদার গ্রুপ, এসআলম গ্রুপ ও সেনা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল-বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ম্রো জাতিসত্তাদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রের ঘটনা আমরা দেখেছি। চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল নির্মাণের ঘটনায় ম্রো জাতিসত্তাসহ দেশের জনগণ তীব্র প্রতিবাদ-আন্দোলন করলেও সরকার ও রাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত তা বাতিল করেনি। এছাড়াও রাঙামাটির সাজেকে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল, পাহাড়-বন-ফসল ধ্বংস করে রাস্তা-ঘাট, পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, পার্বত্য চট্টগ্রামের জন মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বাসস্থান ও ভূমি অধিকারসহ সর্বপোরি পাহাড়ি জনগণের মৌলিক অধিকারকে উপেক্ষা করে অত্র অঞ্চলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম কখনো শোভনীয় নয়। তাই আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি উচ্ছেদসহ পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখল বন্ধ করা, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ভূমিদস্যু ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ” কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে নামে বেনামে পাহাড়িদের বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদ করে অব্যাহত ভূমি বেদখল বন্ধের আহ্বান জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More