লামায় রেংয়েন কার্বারী পাড়ায় হামলা-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিন সংগঠনের নিন্দা

0

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২ জানুয়ারি ২০২৩

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র লেলিয়ে দেয়া দুর্বৃত্তরা রেংয়েন কার্বারি পাড়ায় অগ্নিসংযোগ করে ম্রোদের তিনটি ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। 

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডুলুছড়ি মৌজায় ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ কোম্পানির লেলিয়ে দেওয়া দুর্বৃত্তদের কর্তৃক রেংয়েন কার্বারী পাড়ায় হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত তিন পাহাড়ি গণসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।

আজ সোমবার (২ জানুয়ারি ২০২৩) গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ঘটনার পরে আমরা প্রত্যক্ষদর্শী রেংয়েন কার্বারি সাথে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম যে গতরাত ১ টায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র লিমিটেড কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত দেলোয়ার, নুরু ও মহসিনের নেতৃত্বে রাবার বাগানের একদল শ্রমিক ও ৪ ট্রাক বহিরাগত ভাড়াটেসহ ১৫০ জনের অধিক দুর্বৃত্ত রেংয়েন ম্রো পাড়ায় হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা পাড়াবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। দুর্বৃত্তরা চামরুম ম্রো, চিংচ্যং ম্রো ও রেংইয়ুং ম্রো’র ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এবং দুইঠেঙ ম্রো, রেঙনক ম্রো, রেংইয়ুঙ ম্রো, লাংরুঙ ম্রো, চিতলিত ম্রো ও ইয়ংরিঙ ম্রো’র ঘর ও ঘরের সোলার-ব্যাটারিসহ জিনিসপত্র ভেঙে দেয়। এছাড়াও হামলার সময় দুর্বৃত্তরা পাড়াবাসীদের ছাগল, মুরগী মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ কোম্পানি কর্তৃক গত বছর ৯ এপ্রিল থেকে লামা উপজেলা সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ও লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই নিয়ে ভূক্তভোগী তিন গ্রামবাসীরা তাদের ভূমি ফিরে পেতে স্থানীয় প্রশাসন ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরকে অবগত করেছিলেন। ভূমি রক্ষার দাবিতে লামা, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রাম, ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ ও গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বান্দরবান জেলা পরিষদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রাবার কোম্পানির জমির লিজ বাতিলপূর্বক তিন গ্রামবাসীকে তাদের ভূমি ফেরৎ দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ সমাবেশ, গোল টেবিল বৈঠকে দেশের বিশিষ্টজনেরা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধ করে পাহাড়িদেরকে ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন কোন সমাধান দেয়নি বরং ভূমিদস্যুদের পক্ষালম্বন করেছে। ফলে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোন কিছু পরোয়া না করে ভূমি বেদখলের প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে।

রেংয়েন পাড়ায় পাহাড়িদের ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ কোম্পানি কর্তৃক রেংয়েন পাড়ায় পাহাড়িদের ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, এটি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ইতোমধ্যে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র দুর্বৃত্ত কর্তৃক আগুন দিয়ে গ্রামবাসীদের জুমভূমি, বাগান-বাগিচা, জুম খেত পুড়িয়ে দেওয়া, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, গ্রামবাসীদের হত্যার উদ্দেশ্যে পানির উৎসে বিষ প্রয়োগ, বাগান কেটে দেওয়া, ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতার ওপর হামলা, মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন নিপীড়ন, নির্যাতনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে পাড়াবাসীদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গতরাতে এই হামলার চালানো হয়েছে।

বিবৃতিতে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক রেংয়েন পাড়ায় ৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৬টি বাড়ি ভাঙ্গচুর  ও গ্রামবাসীদের জিনিসপত্র লুট করে নেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র লিমিটেড কোম্পানির মালিক, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি দেলোয়ার, নুরু ও মহসিনসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ভূমিদস্যু ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ” কোম্পানির কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে নামে বেনামে অব্যাহত ভূমি বেদখল ও পাহাড়িদের বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More