শহীদ মিটনের আত্মবলিদানের এক বছর উপলক্ষে রামগড়ে স্মরণসভা

রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
ইউপিডিএফের তরুণ সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ মিটন চাকমার আত্মবলিদানের এক বছর উপলক্ষে রামগড়ে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্মরণসভার ব্যানার শ্লোগান ছিল “শহীদ মিটনের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা হিংস্র জানোয়ারেরা গুড়িয়ে দিতে পারবে না।”
আজ সোমবার (১০ নভেম্বর ২০২৫) সকালে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ স্মরণসভায় এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
স্মরণসভা শুরুতে শহীদ মিটনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে ইউপিডিএফ, যুব ফোরাম, পিসিপিসহ এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করা হয়।



সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি ধনু ত্রিপুরা ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা।
এতে আরো বক্তব্য দেন ইউপিডিএফের রামগড় উপজেলা ইউনিটের সংগঠক সুবর্ণ মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা সভাপতি তৈমাং ত্রিপুরা ও এলাকার জনপ্রতিনিধি চৌয়াইথুই মারমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক সুবর্ণ মারমা বলেন, শহীদ মিটন চাকমা জাতির অধিকার আদায়ের তাগিদে আত্মবলিদান দিয়েছেন। তার এই আত্মবলিদান কখনো বৃথা যাবে না। তার এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আমাদের এটাই শিক্ষা দেয় যে, দমন-পীড়ন যতই বাড়ুক, পাহাড়ি জনগণের মুক্তির সংগ্রাম থামানো যাবে না। মিটন চাকমা যেভাবে সাহসের সাথে আত্মবলিদান দিয়েছেন তার থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জুম্ম জাতীয় নেতা এম এন লারমার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সদস্যরা মিটনকে হত্যা করে তারা আরেক কলঙ্কের ভাগীদার হয়েছে। মিটনের ঘাতকদের জাতি কখনো ক্ষমা করবে না।
তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামসু বাজারে পাহাড়িদের ওপর সেনা-সেটলার হামলার ঘটনা তুলে ধরৈ বলেন, এই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। পাহাড়িদের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদেরকে দমিয়ে রাখার লক্ষ্যেই সেনা-সেটলাররা হামলা, হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। অবিলম্বে এ হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও হামলায় জড়িত সেনা-সেটলারদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।
তৈমাং ত্রিপুরা বলেন, শহীদ মিটনের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তির আন্দোলনকে আরও শাণিত করেছে। তাঁর ত্যাগ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আগামী দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের নতুন প্রজন্মকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হেব।

চৌয়াইথুই মারমা বলেন, মিটন চাকমা ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র সমাজের অনুপ্রেরণা। আজকের তরুণ সমাজ যদি তাঁর আদর্শ ধারণ করে আন্দোলন করতে পারে তাহলে পাহাড়ে নিশ্চয় একদিন অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ধনু ত্রিপুরা বলেন, শহীদ মিটনের লালিত আদর্শে গড়া সত্য ও ন্যায়ের লড়াই কখনো ব্যর্থ হয় না। তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন কীভাবে সাহসের সাথে আত্মবিসর্জন দিতে হয়। তিনি পাহাড়ি তরুণদের সাহসের প্রতীক হয়ে থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক ক্রান্তিকাল চলছে। সেনা অভিযানের নামে সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন, জুলুম, হয়রানি চলমান রয়েছে। এমতবাস্থায় শহীদ মিটনের আত্মবিলদান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সাহসের সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা যদি নির্ভীক চিত্তে লড়ে গিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি তবেই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
