লক্ষ্মীছড়িতে পিসিপির ছাত্র সমাবেশ

শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে- অমল ত্রিপুরা

0

লক্ষ্মীছড়ি ।। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেছেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে মানসম্মত শিক্ষা নেই, অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটেনি, ছাত্রবাস চালু নেই, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই এ সকল দাবি আদায়সহ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’।

আজ রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২) সকাল ১১ টায় খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নের কুদুকছড়ি বাজার মাঠে পিসিপির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

“শপথ বাক্য পাঠের নামে উগ্রজাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা চলবে না, ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়াও, কেবল ৫ ভাষা নয় সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকারসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়ন কর” এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি রুপান্তর চাকমার সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি রিটন চাকমা সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সংগঠক সরল চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক সুদেব চাকমা, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সদস্য বিনোদ মুন্ডা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি পাইচি মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য সুপ্রভা চাকমা প্রমুখ।

সমাবেশে ইউপিডিএফ-এর সংগঠক সরল চাকমা বলেন, ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিপুর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন হয় তার নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যসহ রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী সরকার এদেশের নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে করে রেখেছে। সংবিধানে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে ধ্বংস করার জন্য সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। এখানে নেই কোন গণতান্ত্রিত শাসন ব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি জনগণ প্রতিনিয়ত শোষণ, নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, রাতের আঁধারে ঘরবাড়ি তল্লাশি করে হয়রানি করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে জনগণের অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত প্রকৃত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা-গুম-অপহরণের মত জঘণ্য অপকর্ম পরিচালনা করছে। রাষ্ট্রের এই সকল অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজসহ সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি জুম্ম জনগণের ন্যায্য দাবি ‘পুর্ণস্বায়ত্তশাসন’ আদায়ের লক্ষ্যে ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

পিসিপি নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দেশে সকল কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে ও বিপর্যয় ঘটেছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক এক জরিপে দেখা গেছে করোনাকালীন তিন পার্বত্য জেলায় ২৫টি উপজেলায় ১,৬৫৩টি বাল্যবিবাহ হয়েছে এবং দারিদ্র্যতার ফলে ৫,০৩৭জন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। এটির মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে পাহাড়ে শিক্ষা ব্যবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরবর্তীতে ‘শপথবাক্য পাঠের’ নামে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ‘শেখ মুজিব ও বাঙালী জাতীয়তাবাদের’ চেতনার কথা। এই বক্তব্যর মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল জাতির শিক্ষার্থীদর মধ্যে উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করার করার চেষ্টা করছে সরকার। সার্কুলারের মাধ্যমে এমন ভাবধারা প্রতষ্ঠার চেষ্টা মানে দেশের অন্য জাতিকে অসম্মান করা। তিনি অবিলম্বে সরকারে উগ্রজাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠার সার্কুলারটি বাতিলের দাবি জানান।

এছাড়াও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও গোয়েন্দা নজরদারী প্রভাবমুক্ত করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা চালু, অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন সংকট নিরসন, ছাত্রবাস চালুসহ সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ পিসিপির শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সদস্য বিনোদ মুন্ডা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের কোন নিরাপত্তা নেই, তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার জন্য সরকার একের পর এক চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শুধু ৫ জাতির ভাষায় মাতৃভাষার শিক্ষার সুযোগ দিলে হবে না। এদেশের ৪৫টির অধিক জাতিসত্তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি পিসিপির শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনামা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারে প্রতি জোর আহ্বান জানান।

সমাবেশে সুদেব বলেন, ভাষা হচ্ছে একটি জাতির প্রাণ, তাই জাতি হিসেবে বেছে থাকতে ভাষার অধিকার অবশ্যই দরকার। কিন্তু এই বাংলাদেশ আমাদের ভাষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে, তাই অতি শীঘ্রই সকল মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

হিল ইউমেন্স ফেডারেশনর সদস্য সুপ্রভা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, গুম অপহরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলছে। ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট ফেরদৌস গং কর্তৃক পাহাড়ে নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে। তাঁর খোঁজ এখনো পাইনি। তিনি রাষ্ট্রীয় সকল নিপীড়নের বিরুদ্ধে ও নারী অধিকার বিষয়ে সচেতন হয়ে লড়াই সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

ছাত্র সমাবেশ শেষে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি কুদুকছড়ি বাজার মাঠ থেকে শুরু হয়ে কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে দশবল বৌদ্ধবিহার গেইটে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More