শিক্ষার্থীদের বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী- গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট

0

শিক্ষাঙ্গনে চলমান অরাজকতা বন্ধ করে নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০২৪

সারাদেশে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গঠনের আহ্বান নিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট৷

শুক্রবার (৩০ আগস্ট ২০২৪) এক যুক্ত বিবৃতিতে ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনে প্রবল বৈষম্য, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয় দমন পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আকাঙ্খাকে জাগ্রত করেছে৷ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের অবসান হলেও এদেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটেনি ৷ তাই গণমানুষের এই রাজনৈতিক জাগরণ পরবর্তী যেকোনো শাসকের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাদের ৯ দফা এবং ১ দফা দাবি কোনো অরাজনৈতিক দাবি ছিল না। ফ্যাসিবাদী শোষণ যন্ত্র হিসাবে বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করতে চায়। এর অংশ হিসাবে জনগণের নানা অংশে বিভাজন সৃষ্টি করা, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করা ও নানা আইওয়াশের মধ্যে জনগণকে ব্যস্ত রাখার কৌশল কার্যত ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখার কৌশল।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলা হলেও এর সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ও মেয়াদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি। নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতের প্রশ্নটি বারবারই আড়ালে চলে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশজুড়ে নানা অরাজকতা বিদ্যমান। একই পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ, অবকাঠামোগত সংকট, প্রশাসনিক গণতন্ত্রায়ন, আবাসন-পরিবহন সংকট, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকলেও শুরুতেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আওয়াজ তুলে কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করা হয়। অথচ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজনীতিতে সক্রিয় কিংবা নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন বিভাজন ছিলো না৷ সবার অবস্থান ছিলো ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পাশাপাশি নানা রাজনৈতিক শক্তির সচেতন তাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক ভূমিকা এই আন্দোলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যায় ৷ অথচ অভ্যুত্থান পরবর্তী অস্থির সময়ে নানা বিভ্রান্ত ও সুযোগসন্ধানী অংশ মব জাস্টিসের মধ্য দিয়ে গণহারে শিক্ষকদের অপদস্ত করা, জবরদস্তিমূলক পদত্যাগ করানো, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু গুরুতর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে৷ যা শিক্ষাঙ্গনের যৌক্তিক, ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

ইতিমধ্যে বেরোবি, বাকৃবি, ববি, কুবি, চুয়েট, শাবিপ্রবিসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শধারী শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে। কোন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব কিংবা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করলে তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ সুনির্দিষ্টভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করে গড়পড়তা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পায়তারা শিক্ষাঙ্গনে ফ্যাসিবাদী মনন গড়ে তুলবে৷ অতীত ইতিহাসে আইয়ূব খান, এরশাদসহ প্রতিটি স্বৈরশাসক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পায়তারা করেছিলো৷ পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ, বিএনপি কিংবা জামাতের শাসনকালে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না হলেও একে কলুষিত করার সমস্ত আয়োজন করা হয়৷ এদেশে প্রতিটি শাসক তার শোষণের স্বার্থে এই বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি করে গেছে। অথচ যে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের অজুহাতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের অওয়াজ তোলা হচ্ছে তার অসাড়তা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান৷ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নামে বেনামে দখলদারিত্ব চলছে। অরাজনৈতিক পরিচয়ে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও নানা সুবিধা আদায়ের মানসিকতা থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলন পরবর্তীতে দীর্ঘদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে জিঁইয়ে রাখা হয়েছে। সমন্বয়কদের ঘিরে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে ছাত্র সন্ত্রাস এবং দখলদারিত্ব। ফলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসের বিলোপ ঘটবে না ৷ বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রুদ্ধ হলে শিক্ষাঙ্গনে একচোটিয়া কর্তৃত্ব, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও নিষিদ্ধ শক্তির বিকাশ ঘটবে ৷

বিবৃতিতে অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গনে চলমান অরাজকতা বন্ধ, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু এবং দেশের সকল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More