শিক্ষা দিবসে খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র ছাত্র সমাবেশ ও র্যালি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: শিক্ষা দিবস উপলক্ষে “সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু সহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের” দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বুধবার খাগড়াছড়িতে ছাত্র সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদরের নারানহিয়া মাঠে বুধবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বিপুল চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক ও পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মিঠুন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিটন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক শিখা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকু ত্রিপুরা প্রমুখ। পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার তথ্য প্রচার সম্পাদক সুভাষ চাকমা সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক ও বহুভাষিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু ভিন্নভাষাভাষি জাতিসত্তাসমূহকে নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে পড়াশুনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে শাসকগোষ্ঠি সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে।
বক্তারা আরো বলেন, অধিকার কেউ কাউকে এমনিতে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজকেও মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা সহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি আদায়ে, শাসক গোষ্ঠির করাল গ্রাস থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না করে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে। এর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসরত সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু সহ পিসিপি’র উত্থাপিত শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে নারানহিয়া মাঠ থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি উপজেলা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার সমাবেশ স্থলে এসে শেষ হয়। সমাবেশ ও র্যালিতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি হলো: ১. পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসত্বার মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, ২. স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে জতিসত্বার প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বাদ দিতে হবে, ৩. পাহাড়ি জাতিসত্বার বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী ও সঠিক সংগ্রামী রাজনৈতিক ইতিহাস স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, ৪. বাংলাদেশের সকল জাতিসত্বার সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতি মূলক রচনা জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে ও ৫. পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়িদের বিশেষ কোটা চালু করতে হবে।
আরো উল্লেখ্য যে, ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শরীফ শিক্ষা কমিশনের জনবিরোধী শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববাংলার ছাত্র সমাজ সারাদেশে একযোগে হরতাল আহ্বান করে। এদিন পাকিস্তান সরকারের লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী ও পুলিশ ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এতে অনেকে হতাহত হয়। গ্রেফতার করা হয় শতশত ছাত্রকে। এরপরও ছাত্র সমাজ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে এ ঘটনার তিন দিনের মধ্যে সরকার ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে শরিফ শিক্ষা কমিশন স্থগিত করতে বাধ্য হয়। সেই থেকে ছাত্র সমাজ ১৭ সেপ্টেম্বরকে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।