শিশু র্যালি সহ নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ’র ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
শিশু র্যালি সহ নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
আজ ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯.২০টায় খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া মাঠে ইউপিডিএফের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসার আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় তিন সদস্যের একটি চৌকষ পতাকাবাহী দল দলীয় পতাকা বহন করেন।
পতাকা উত্তোলনের পর শুরু হয় শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন। প্রথমে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা ও উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা। এরপর জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ জনগণ ও শিশু-কিশোররা পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ, পিসিপি, ডিওয়াইএফ, এইচডব্লিউএফ, জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতা-কর্মী, শিশু-কিশোরসহ এলাকার সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন। পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রসিত বিকাশ খীসা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের জনগণের অধিকার, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সম্মান জানাই। যতদিন এই সমাজ ঠিকে থাকবে, যতদিন এই জগৎ ঠিকে থাকবে ততদিন যারা জনগণের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তারা স্মরনীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, কোন কোন মৃত্যু বেলে হাঁসের পালকের চাইতেও হাল্কা, আর কোন কোন মৃত্যু থাই পাহাড়ের চাইতেও ভারী। যারা দেশ ও জনগণের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য আত্মাহুতি দেন তাদের জীবন মহিমান্বিত, আমরা তাদের সর্বাগ্রে স্মরণ করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে তথা এই অঞ্চলে যদি সুখী ও সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তারাই এভাবে সম্মানিত হবেন। এ মহান কাজে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সমাজ জাতির সামগ্রীক উন্নয়ন ও মঙ্গলের জন্য আমাদের পার্টি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরপর সকাল ১১টায় প্রসিত বিকাশ খীসা স্বনির্ভর মাঠে শিশু র্যালী উদ্বোধন করেন। ইউপিডিএফ নেতা শান্তিদেব চাকমা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রসিত খীসা বলেন, আমাদের ক্ষমতা সীমিত, পার্টি হিসেবে আমারা প্রশাসনিক ক্ষমতা পালন করিনা, রাজনৈতিক ক্ষমতাও আমাদের নেই। কিন্তু আমরা চাই এর মধ্য দিয়ে অন্যরাও যাতে সহযোগীতায় এগিয়ে আসে এবং এই বোধ জাগ্রত হয়। আমাদের শিশুদের সহযোগিতার পরিবেশ দরকার। পুরনো ঘুনেধরা অফিস কেন্দ্রীক বা বাইরের আয়াসের মধ্যে থেকে নয়, জীবন সংগ্রামের বাস্তবতা, পরিবেশ এবং সমস্ত প্রতিকূলতা যেন নিজেরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, আজকে যে শিশুরা বেলুন হাতে দাড়িয়ে আছে, হাতে ফুলের তোরা এবং রঙিন রিবন দেখা যাচ্ছে, তাদের এই উৎসব, এই হাসি যাতে স্থায়ী হয়। তাদের এই আনন্দঘন মুহুর্তগুলো যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে। তাদের ভবিষ্যত যাতে নিরাপদ নিশ্চিত হয় এবং তারা যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে সবার জন্য অবদান রাখতে পারে।
প্রসিত খীসা আরো বলেন, আজকের কনকনে ঠান্ডার দিনে দাঁড়িয়ে এই বিষয়গুলো হয়তোবা তারা উপলব্ধি করতে পারবে না কিন্তু আগামী ১০-১২ বছর পরে তারা অনেক স্মরনীয় দিনের মধ্যে আজকের এই দিনটা স্মরণ করবে, মনে রাখবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই ধরনের পরিবেশ আমরা পাইনি। আমরা যদি পরিবেশ পেতাম তাহলে আমরা অনেক কিছু শিখে নিতে পারতাম। সরকার প্রশাসন আমাদের সহায়ক ছিল না। শুধু এই অঞ্চলে নয়, গোটা দেশে যদি বলি সবাই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। কেবল গুটিকয়েক যারা ননী খেয়ে বড় হচ্ছে তারাই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। সত্যিকারের যারা অবহেলিত বঞ্চিত সেই শিশুদের এমন পরিবেশ দরকার। আমরা তেমন কিছু দিতে পারছি না। এই শিশুরা যদি আজকের দিনটা জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হিসেবে মনে রাখে, শীতার্ত সকালে দাড়িয়ে কিভাবে অনুষ্ঠান করতে হয় তা শেখে সেটাই হবে তাদের জীবনের বড় পাওনা। আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে তারা কিছুটা হলেও প্রেরণা লাভ করবে সেটাই কামনা করি।
বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে তুমুল করতালি ও মুর্হুমুর্হু স্লোগানের মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোররা আকাশে বেলুন উড়িয়ে দেয়।
এরপর “আমরাও চাই উন্নত শিশুদের সমকক্ষ হতে” শ্লোগানকে ধারণ করে অগ্রগামী শিশু কিশোর সমাবেশ’র ব্যানারে স্বনির্ভর মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শিশু র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি নারাঙহিয়া, উপজেলা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার গেলে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পরে শিশু-কিশোরা রাস্তায় বসে পড়লে এক পর্যায়ে পুলিশ ব্যারিকেড তুলে নিতে বাধ্য হয়। পরে র্যালিটি মহাজন পাড়ার সূর্যশিখা ক্লাবের সামনে থেকে ঘুরে এসে ঘুরে এসে আবার স্বনির্ভর মাঠে এসে শেষ হয়। শিশু-কিশোররা ’লঙ লিভ, লঙ লিভ, ইউপিডিএফ-ইউপিডিএফ’ শ্লোগানে র্যালিটি আনন্দমুখর করে তোলে। র্যালি চলাকালে শিশু-কিশোররা নারাঙহিয়া মাঠে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন করে। র্যালির অগ্রভাগে ইউপিডিএফ’র একটি বড় পতাকা বহন করা হয়।