সংবিধান সংস্কার কমিশনে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির দাবিতে কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
“পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে বৈষম্য মানি না” শ্লোগানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফভুক্ত চার সংগঠন।
আজ মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর ২০২৪) বিকাল ৩টার সময় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা শাখাসমূহ যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
বিক্ষোভ মিছিলটি কুদুকছড়ি হাফ বাজার থেকে শুরু হয়ে কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে বড়মহাপূরম উচ্চ বিদ্যালয়ে মূল ফটকে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা সভাপতি তনুময় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বারিঝে চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা দপ্তর সম্পাদক রিতা চাকমা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের প্রতিনিধি জয়ন্ত রেখা চাকমা।
বক্তারা বলেন, পাহাড়িদের দীর্ঘ দিন ধরে অধিকার বঞ্চিত ও উপেক্ষিত করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে পাহাড়িদের অধিকার ও স্বীকৃতি না দিয়ে বাঙালি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আশির দশকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় সমতল থেকে বাঙালিদের পাহাড়ে এনে কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার অজুহাতে পাহাড়কে সেনা কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। এভাবে যুগের পর যুগ পাহাড়িদের সাথে দূরত্ব তৈরী করে রাখা হয়েছে।

তারা বলেন, ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তনের আশা নিয়ে আমরাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানের পর দেশটা সত্যিকার একটি বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম দেখে আমাদেরকে আরো আশঙ্কিত করে তুলছে। পাহাড়িদের উপেক্ষিত রাখার প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি। যার উদাহরণ হচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশনে পাহাড়িদের কোন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত না করা। প্রকৃতপক্ষে সরকারের যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে সমাধানের ইচ্ছা থাকতো তাহলে সংবিধান সংস্কার কমিশনে পাহাড়িদের প্রতিনিধি রেখে তা সমাধানের চেষ্টা করতো।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ বহু জাতির দেশ। এখানে বাঙালি ভিন্ন অন্তত ৫০টির মতো ভিন্ন ভাষাভাষি জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে। এসব জাতিসত্তাগুলোকে বাদ দিয়ে, সাংবিধানিকভাবে তাদেরকে অধিকার না দিয়ে বাংলাদেশ কখনো একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না।
বক্তারা বলেন, পাহাড়িদের অধিকার স্বীকার না করে তাদেরকে ’বিছিন্নতাবাদী’ তকমা দিয়ে দূরত্ব তৈরী করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে বিছিন্ন হতে চাই না, আমরা নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে অধিকার ও আত্মমর্যাদা চাই।
বক্তারা সত্যিকার অর্থে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।