সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবিতে পিসিপি’র বিক্ষোভ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার সহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী আজ ১২ ফেব্রুয়ারী পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)৷ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমাবেশ ও মিছিলে বাধা প্রদান করেছে৷ রাঙামাটি জেলার নান্যাচরে অন্যায়ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

খাগড়াছড়ি: দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার মধুপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার সভাপতি সুজেল চাকমা৷ এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ক্যহাচিং মারমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উমেশ চাকমা, দপ্তর সম্পাদক বিপুল চাকমা, খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সন্দীপন চাকমা৷ সভা পরিচালনা করেন পিসিপি খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় চাকমা। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়৷ ফলে মিছিল করা সম্ভব হয়নি।

পানছড়ি : সকাল ১১টায় পানছড়ি কলেজ মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়৷ মিছিলটি পানছড়ি বাস স্টেশনে গেলে সেখানে পুলিশ বাধা দেয়৷ পরে সেখান থেকে মিছিলটি আবার কলেজ গেটের বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে গিয়ে শেষ হয়৷ সেখানে এক বিােভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিমল চাকমা৷ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চন্দদেব চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক সমীরণ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি নিকোলাস চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি পিকা চাকমা৷ সভা পরিচালনা করেন পিসিপি পানছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিকমল ত্রিপুরা৷

দিঘীনালা : সকাল ১১টায় দিঘীনালা উপজেলার বাবু পাড়ায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দিঘীনালা থানা শাখার সহ সভাপতি জীবন চাকমা৷ এতে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সুব্রত ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি রেমিন চাকমা, দিঘীনালা থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক কিশোর চাকমা, দিঘীনালা কলেজ শাখার সভাপতি নয়ন চাকমা৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি দিঘীনালা থানা শাখার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নান্টু চাকমা৷

মহালছড়ি : মহালছড়ি সদরে বাবু পাড়ায় সমাবেশ করার কথা থাকলেও পুলিশের বাধার কারণে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করতে হয়৷ পুলিশ সমাবেশের জন্য তৈরি করা প্যান্ডেল ভেঙে দেয়৷দুপুর ১২টায় মাইসছড়ি বাজারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মহালছড়ি থানা শাখার সভাপতি অসীম চাকমা৷ এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য বিপর্শী চাকমা, মহালছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দুনয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহালছড়ি থানা শাখার সভাপতি সর্বানন্দ চাকমা৷ উপস্থাপনা করেন পিসিপি মহালছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ চাকমা৷

গুইমারা : সকাল ১১টায় গুইমারা সদরের রামেসু বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়৷ এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ পরে রামেসু বাজারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, গুইমারা স্কুল শাখার আহ্বায়ক চিত্র জ্যোতি চাকমা ও গোমতি ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক পঞ্চসেন ত্রিপুরা৷

মানিকছড়ি : মানিকছড়ি কলেজ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা থাকলেও প্রশাসনের বাধার কারণে কলেজ মাঠে সমাবেশ করা সম্ভব হয়নি৷ পরে সেখান থেকে সমাবেশের স্থান হাতিমুড়া বাজারে স্থানান্তর করা হয়৷ সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়৷ পরে সেখানে সংপ্তিভাবে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা বক্তব্য রাখেন

কুদুকছড়ি : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাঙামাটি জেলার কুদুকছড়ি বাজার মাঠে সকাল ১১:১৫ টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি বিলাস চাকমা৷ রাঙামাটি জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক তাপুমনি চাকমার উপস্থাপনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সিনিয়র সদস্য পল্টু চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা কমিটির নেতা সোনামুনি চাকমা৷ সমাবেশে বিভিন্ন স্কুল থেকে দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন৷ সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কুদুকছড়ি বাজার প্রদণি করে শেষ হয়।

নান্যাচর : নান্যাচর উপজেলায় সকাল থেকে সেনাবাহিনী বিভিন্ন পয়েন্টে হুমকিমূলক অবস্থান নেয়৷ তারা নান্যাচর বাজার থেকে টিএন্ডটি আসার রাস্তা দিয়ে মানুষজনের চলাচল বন্ধ করে রাখে৷ পরে বাজার এলাকায় প্রশাসন অন্যায়ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে৷ তারপরও দুপুর ১টার দিকে টিএন্ডটি মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর থানা শাখার সহ সভাপতিপ্রান্তর চাকমা৷ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিপন চাকমা ও পিসিপি সদস্য বিপাশা চাকমা৷ বক্তারা সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান৷

কাউখালী :সকাল ১১টায় কাউখালী উপজেলা সদরের কচুখালী থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়৷ মিছিলটি কাউখালী সদর স্কুল ঘুরে আবার কচুখালীতে গিয়ে শেষ হয়৷ সেখানে কচুখালী স্কুল মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালী থানা শাখার আহ্বায়ক শুক্রসেন চাকমা৷ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা, রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাবলু চাকমা, কাউখালী কলেজ শাখার সদস্য চিকন চান চাকমা, বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শাখার সদস্য উথোয়াইচিং মারমা, কাউখালী সদর স্কুল কমিটির সভাপতি উত্‍পল চাকমা ও নান্যাচর কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি বিনয়ন চাকমা৷

বিভিন্ন উপজেলায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা প্রশাসনের মিছিল-সমাবেশে বাধা দানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মিছিল-মিটিঙ ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার একটি সংবিধান স্বীকৃত অধিকার৷ কিন্তু প্রশাসন এই সংবিধান স্বীকৃত অধিকারে উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করে কার্যত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট আচরণ করছে৷ বক্তারা অবিলম্বে সভা-সমাবেশের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ তুলে নেয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান৷

বক্তারা পিসিপির ঘোষিত ১৮ ফেব্রুয়ারী জেলা সদরে বিক্ষোভ, ২০ ফেব্রুয়ারী কাশ বর্জন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবংমাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্তদাবিনামা আদায়ের ল্যে সোচ্চার ভূমিকা পালনের জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান৷

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা সহ অবিলম্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উত্থাপিত শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান৷

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উত্থাপিত শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিসমূহ হলো : ১. পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; ২. জাতিসত্ত্বার প্রতি অবমাননাকর যেকোন বক্তব্য পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে; ৩. পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার সঠিক ও সংগ্রামী রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বলিত পুস্তক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; ৪. বাংলাদেশের সকল জাতিসত্ত্বার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক পুস্তক বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; ৫. পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি কোটা চালু করতে হবে৷

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More