সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে সাজেকে আলোচনা সভা

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২১ আগস্ট ২০২৪
“ব্রিটিশদের রুখে দিয়েছে রুণু খাঁ’রা, ৪৭-এ পাকিস্তান মেনে নেয়নি স্নেহবাবুরা, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটাতে লড়েছি আমরাও” শ্লোগানে সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (২১ আগস্ট ২০২৪) দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘পাকিস্তানি আগ্রাসনের’ ৭৭ বছর উপলক্ষে ‘জাতীয় গৌরব অনুসন্ধানে নতুন প্রজন্ম’ ব্যানারে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভা শুরুর আগে সকাল ১০টায় রুণু খাঁ, স্নেহ কুমার চাকমা ও রাণী কালিন্দীসহ জাতীয় বীরদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় দেশভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির সাথে জড়িত র্যাডক্লিফ, তৎকালীন বেলুচ রেজিম্টের ছবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা হরণকারী ফজলুল কাদের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের দালাল হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, দীপংকর তালুকদার ও বীর বাহাদুরের ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে প্রদর্শন করা হয়।
এরপর দুপুর ১২টার সময় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল লড়াই সংগ্রামে আত্মত্যাগকারী মানুষদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শুক্র চাকমার সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে আলোচনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক রুপেশ চাকমা।
রূপেশ চাকমা বলেন, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ৬ দিনের মাথায় ২০ আগস্ট পাকিস্তান সরকার বেলুচ রেজিমেন্টকে দিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দখলে নিয়েছিল। তার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্তির আশায় ১৫ আগস্ট সকালে স্নেহু কুমার চাকমার নেতৃত্বে রাঙামাটিতে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। একইভাবে বোমাং রাজ পরিবারের নেতৃত্বে বান্দরবানে উত্তোলন করা হয়েছিল বার্মার পতাকা। কিন্তু বেলুচ রেজিমেন্ট সেসব পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি শাসন কায়েম হয় এবং পাহাড়িদের জীবনে শুরু হয় এক অভিশপ্ত অধ্যায়। যার থেকে আজো মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে নয় মাস সশস্ত্র সংগামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা রক্ষা হয়নি। উপরন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালি শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণের জাতিসত্তার স্বীকৃতি না দিয়ে ঢালাওভাবে সবাইকে “বাঙালি” হিসেবে আখ্যায়িত করে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পাহাড়িদের উপর নিপীড়নের স্টিম রোলার চালানো হয়। যা আজো চলমান রয়েছে।
এদেশের শাসকগোষ্ঠি পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার জন্য অধিকার বঞ্চিত রেখেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক নিপীড়নের ক্ষেত্র বানিয়েছে। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একদিকে পূনরায় বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দমনমূলক ১১ নির্দেশনা জারি করে সেনাশাসনকে আরো পাকাপোক্ত করেছে। ফলে পাহাড়ের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, গত ৫ আগষ্ট দেশে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। জনতার রোষের ভয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু দেশের সমতলে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো আগের মতোই সেনাশাসন বলবৎ রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে পাহাড়ে সংঘটিত হত্যার বিচার ও রাজবন্দীদের মুক্তি মেলেনি। তাই পাহাড়ে সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং অস্তিত্ব রক্ষা ও অধিকার আদাযের লক্ষ্যে ছাত্র-যুবকসহ জনগণকে ঐক্যেবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ও রাজন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।