সাজেকের মাজলঙে শহীদ রূপন ও সমর-সুকেশ-মনতোষের বীরত্বপূর্ণ স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মরণসভা

0


সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

“জনগণের জন্য যারা জীবন দেন তারা চিরস্মরণীয়” শ্লোগানে ‘চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার, সাজা প্রদান ও কল্পনাকে দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে ২৭ জুন ১৯৯৬ সালে আহূত সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে বীর শহীদ রূপন চাকমা ও সেটলার পাড়ায় গুমের শিকার সমর-সুকেশ-মনতোষের বীরত্বপূর্ণ স্মৃতি উদ্দেশ্যে’ সাজেকের মাজলঙে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আজ শুক্রবার (২৭ জুন ২০২৫) দুপুর ১২টার সময় শ্লোগানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখাসমূহের উদ্যোগে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি উজ্জ্বলা চাকমার সভাপতিত্ব ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক সমর চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সংগঠক নিরোধ চাকমা ও রিয়েল চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটি জেলা কমিটির সদস্য পলেন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সমরিতা চাকমা।

স্মরণ সভা শুরুতে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।  


স্মরণ সভায় উজ্জ্বলা চাকমা বলেন, বাঘাইছড়ি এলাকাবাসীর গর্বিত নারী নেত্রী অগ্নিকণ্যা কল্পনা চাকমা নব্বই দশকে আমাদের বেঁচে থাকার পথ, লড়াই সংগ্রামের পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি সাহসের সাথে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কল্পনার প্রতিবাদী কন্ঠকে রূদ্ধ করতে রাতের আঁধারে অপহরণ করেছে এবং গুম করা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের দাবিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ৯৬ সাালের আজকের এই দিনে রূপন চাকমা পুলিশ-ভিডিপির গুলিতে শহীদ হয়েছে, আর সমর-সুকেশ-মনতোষকে সেটলাররা গুম করেছে।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি নারীরা কেবলমাত্র ঘরের কোণে আবদ্ধ হয়ে থাকলে চলবে না, সমাজের নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, নারীর অধিকারের জন্য লড়তে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল মা-বোনের মুখে হাসি ফোটাতে নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সম্ভ্রম রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।

ইউপিডিএফ সংগঠক নিরোধ চাকমা বলেন, আমাদের পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করছে, অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে সাথে নিয়ে লড়াই সংগ্রামে চালিয়ে যাবো।

ছাত্রদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, জাতির অধিকারহারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে ছাত্র সমাজই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জন্য তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরেক ইউপিডিএফ সংগঠক রিয়েল চাকমা বলেন, নতুন প্রজন্ম যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীতের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে না পারি তাহলে আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় থেকে পিছিয়ে থাকবো।

তিনি আরো বলেন ঐতিহাসিক প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারহারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ইউপিডিএফ’র জন্ম হয়েছিল। শত বাধা মোকাবেলা করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ইউপিডিএফ লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ইউপিডিএফ’র পতাকাতলে সমবেত হয়ে জাতির মুক্তির সনদ পূর্ণস্বায়ত্বশাসনের লড়াই সংগ্রাম বেগবান করতে হবে।

ছাত্রনেতা পলেন চাকমা বলেন, রূপন, সমর, সুকেশ ও মনতোষ চাকমার শহীদ ও গুম হয়ে নিখোঁজ হওয়ার ২৯ বছর পূর্ণ হলো। তাঁরা চার জন নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারে দাবিতে সড়ক অবরোধ পালন করতে গিয়ে শহীদ ও গুম হয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, যে ভাই, বোনকে উদ্ধারের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল, সাহস ও বীরত্বের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী-সেটলারদের সাথে লড়াই করে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন জাতির কাছে তারা বীর এবং চির অমর।

“জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত” এমনই অঙ্গীকার বর্তমান ছাত্র সমাজের থাকা উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সভায় সমরিতা চাকমা বলেন, বর্তমান সময়ে ছাত্র ও নারী সমাজের করণীয় হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। রাষ্ট্রের সকল অপশক্তি বিরুদ্ধে ও জাতীয় দালালদের প্রতিহত করতে আমাদেরকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

তিনি অধিকার আদায়ের আন্দোলন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কল্পনার উত্তরসূরী হয়ে লড়াই করে যাবো বলে দৃঢ় প্রত্যেয় ব্যক্ত করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More