সাজেকে আলোচনা সভায় সচিব চাকমা : চুক্তির মাধ্যমে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছিল

0


সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

‘বিশ্বাসঘাতকতাপুর্ণ প্রতারণা চুক্তির ২৮ বছর পূর্তি’ উপলক্ষে সাজেকের মাজলঙে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ইউপিডিএফ বাঘাইছড়ি ইউনিট।

সভায় ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা বলেছেন, ‘১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সন্তু লারমার স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছিল।’

আজ ২ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ব্যানার শ্লোগান ছিল “ব’ যিয়ে চুক্তির আঝায় ন থেবং, চাগালা ভাঙি হোযেই এয’ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনৎ লামি”, “অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়”।

সভায় সাজেক, মাজলং, গঙ্গারাম, বঙ্গলতলীসহ বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি, কার্বারি, হেডম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীসহ দেড় শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।


ইউপিডিএফ সংগঠক রিপন চাকমার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফের সাজেক ইউনিটের সমন্বয়ক উত্তম চাকমার সভাপতিত্বে মূল আলোচক ছিলেন ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অক্ষয় চাকমা, সাজেক ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার থোনা পাংখুয়া, বঙ্গলতলী ইউপি চেয়ারম্যান জ্ঞান জ্যোতি চাকমা, সাজেক কারবারী এশোসিয়েশন সভাপতি নতুন জয় চাকমা, সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবুধন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপায়ন চাকমা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা চুক্তির আগে ও পরের ঘটনাবহুল বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে দীর্ঘ আলোচনা করেন।  

তিনি বলেন, আসলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জেএসএস তথা সন্তু লারমার যে চুক্তি তার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছিল। আর এতে লাভবান করা হয় সরকার ও শাসকগোষ্ঠিকে।  

তিনি বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, জেএসএস বা সন্তু লারমারা বর্তমানে সেনাবাহিনীর সাথে মিলে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি উষাতন তালুকদার ইউপিডিএফকে উদ্দেশ্য করে ‘পথের কাঁটা’ সরানোর কথা বলেছেন।

তিনি সন্তু লারমা নীতিচ্যুত-পথভ্রষ্ট, দালালে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন এবং চুক্তির আশায় না থেকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

অক্ষয় চাকমা বলেন, চুক্তিতে যে অসঙ্গতি রয়েছে, চুক্তিতে যে জুম্ম জনগণের মুক্তি মিলবে না সে বিষয়ে তৎসময়ে তিন সংগঠনসহ অনেকে নানা মন্তব্য করেছেন। দীর্ঘ ২৮ বছরে এসে চুক্তির সময়কালীন যে মন্তব্য করা হয়েছিল তা প্রতিফলন ঘটেছে।

তিনি বলেন, জুম্ম জনগণের মুক্তির একমাত্র পথ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন। তাই সবাইকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রামে সামিল হওয়ার সময় এসেছে।

নতুন জয় চাকমা বলেন, চুক্তির আগে যত না জুম্মোরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তার অধিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছি চুক্তির পরে। সুতরাং, চুক্তিটি যে জুম্মো জনগণের কোন কাজে লাগেনি তা আজ ২৮টি বছরে তার প্রমাণ মিলেছে।


ছাত্রনেতা দীপায়ন চাকমা বলেন, চুক্তি কালীন দু’চোখে দেখার সুযোগ হয়নি। বই পড়ে এবং সংগঠন করার সুবাদে চুক্তির ব্যাপারে কিছু ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। চুক্তির মাধ্যমে যেহেতু অধিকার অর্জিত হয়নি সেহেতু পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে ছাত্র যুব সমাজকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।


বাবুধন চাকমা ২ ডিসেম্বর দিনটিকে ‘বন্দুক বেজা (বন্দুক বিক্রি)’ দিবস, প্রতারণা দিবস উল্লেখ করে বলেন, সন্তু লারমাকে ঠকিয়েছেন শেখ হাসিনা আর পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে ঠকিয়েছেন সন্তু লারমা। ফলে এই চুক্তি জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার পূরণ করতে পারেনি। তাই, আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে উত্তম চাকমা বলেন, চুক্তির মাধ্যমে অর্জনের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বেশি। সামাজিক নেতৃত্ব, জাতিগত ঐক্য  বিনষ্ট হয়েছে। উঠতি বয়সী ছাত্র-যুবকদের ভবিষ্যত নষ্ট হয়েছে। কাজেই ২৮ বছরে যে চুক্তি বাস্তাবয়ন হয়নি সে চুক্তি নিয়ে আমাদের আর পড়ে থাকলে হবে না। আমাদের সামাজি ও রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।

শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে টিভির পর্দায় একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।




This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More