সাজেকে চার স্থানে শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ)-এর স্মরণে ইউপিডিএফ’র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

সাজেক প্রতিনিধি ।। পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নির্ভীক সৈনিক শহীদ নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-এর স্মরণে সাজেকে পৃথক চারটি স্থানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে ইউপিডিএফ।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ ২০২২) বিকাল ৬টায় ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের উদ্যোগে সাজেক ইউনিয়নের ৮নং পাড়া, চিল্লেতলি, উজ্জেংছড়ি ও ভূঁয়োছড়িতে এই প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শুরুর পূর্বে শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ)সহ সকল শহীদের স্মরণে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সাজেক ৮নং পাড়ায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সদস্য আপেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক লঙ্কা চাকমা ও সদস্য দীপায়ন চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ১৫ মার্চ ২০২২ সেনাবাহিনীর হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে ইউপিডিএফ নেতা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিশ্বস্ত সংগঠক নবায়ন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে কী নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন চলছে তা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ দিয়েছে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ন্যায্য দাবি পূর্ণস্বায়ত্তাশসন মেনে না নিয়ে সরকার যেভাবে অন্যায় দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা যায় না। নবায়ন চাকমাকে হত্যা করা গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না।
চিল্লেতলি এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সদস্য রিটেশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক দীঘোল চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য প্রান্তিক চাকমা।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান দমন-পীড়ন থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে জনগণের প্রাণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সরকার-শাসকগোষ্ঠী জনগণের ন্যায্য দাবিকে স্তব্ধ করে দেয়ার একমাত্র লড়াকু সংগঠন ইউপিডিএফের নেতা-কর্মিদের উপর অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন জারি রেখেছে। তারই একটি জলন্ত উদাহরণ ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমাকে অন্যায়ভাবে আটক ও নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা।
তারা বলেন, একজন বিপ্লবীকে হত্যা করা যায় বটে, তার আদর্শ, চেতনাকে কখনো হত্যা করা যায় না। শহীদ নবায়ন চাকমা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
উজ্জেংছড়িতে অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সংগঠক নিরোধ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের সমন্বয়ক অডিট চাকমা ও মেহেন ত্রিপুরা প্রমুখ।
অডিট চাকমা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে একনিষ্ট ও আপোষহীনভাবে যে অবদান রেখে গেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আত্মবলিদান কখনো বৃথা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন অপারেশন উত্তরণ জারি রেখে এক অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যার ফলে এখানে শুধু অধিকারকামী রাজনৈতিক কর্মিরা নয়, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও আর নিরাপদে চলাফেরা ও নিজ বাড়িতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কখন কাকে ধরে নিয়ে যায়, কখন কার বাড়িতে তল্লাশি চালায় তা নিয়ে জনসাধারণ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি অবিলম্বে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধসহ নবায়ন চাকমাকে নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের চিহ্নিত আইনির আওতায় আনার দাবি জানান।

ভূঁয়োছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইউপিডিফ সদস্য বধিক চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক ওমান চাকমা, রিগেল চাকমা ও হিজল চাকমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা জুম্ম জনগণের প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন