সাজেকে পর্যটনের নামে চলছে জুম্ম উচ্ছেদের পাঁয়তারা!

0

Muktomot copy

।। পারদর্শী।।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক।  ২০১০ সালের ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি এই সাজেকে জুম্মদের উপর নির্বিচার হামলা, ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল লক্ষ্মী বিজয় ও বুদ্ধপুদি চাকমাকে। এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল বাঘাইহাট জোনের তৎসময়ের জোন  কমান্ডার লে. কর্নেল ওয়াসিম। আর হামলায় অংশ নিয়েছিল বাঘাইহাট জোনের সেনা সদস্যরা।  তারাই লেলিয়ে দিয়েছিল বর্বর সেটলার বাঙালিদেরকে, যারা জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সহায় সম্পত্তি লুটপাট করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।  এখানে জোন কমান্ডার তার নিজের ইচ্ছায় নিশ্চয় এ হামলা চালায়নি।  তার এ কাজে সরকার এবং সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন নেতৃত্বের নির্দেশ যে ছিল তা বলাই বাহুল্য।  তা নাহলে পর পর দু’দিন ধরে  হামলা চালানো এবং প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে নিরীহ দু’জন মানুষকে (একজন নারীসহ) হত্যা করার সাহস পেতো না।

সাজেক পর্যটন কেন্দ্র
সাজেক পর্যটন কেন্দ্র

এর আগেও সাজেকে হামলা হয়েছিল। সেটা ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল। তখনও জুম্মদের প্রায় ৮০টি ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছিল।  সে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল তৎকালীন জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাজিদ ইমতিয়াজ ও তার দলবল। তারাও লেলিয়ে দিয়েছিল সেটলারদের।

তাহলে সাজেকে জুম্মদের উপর হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লক্ষ্মী বিজয় ও বুদ্ধপুদি চাকমার হত্যাকারী কারা? এর উত্তর হচ্ছে- সেনাবাহিনী।  কিন্তু এই হামলা ও হত্যাকান্ডের কি কোন বিচার হয়েছে? উত্তর হচ্ছে- না, হয়নি। যারা প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে, তারা কিভাবে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাতে পারে?  উন্নয়নের নামে যে আরো মানুষ হত্যা করা হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? সাজেকের নিরীহ পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে তারা কিসের উন্নয়ন করতে চাই? এগুলো হচ্ছে এখন মূল প্রশ্ন।

সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত লক্ষ্মী বিজয় চাকমা। # ফাইল ছবি।
সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত লক্ষ্মী বিজয় চাকমা। # ফাইল ছবি।

সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে সাজেককে তারা দার্জিলিং বানাবে।  ইতিমধ্যে খবর পাওয়া গেছে সাজেকের রুইলুই পর্যটন এলাকা থেকে অনেক পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে, অনেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন। আর যারা বর্তমানে বসবাস করছেন তাদেরকে পর্যটন এলাকার নতুন কোন ঘর তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি সত্যিকার অর্থে দার্জিলিং বানাতে হয় তাহলে সাজেকের নিরীহ লোকজনকে উচ্ছেদ করে কেন?

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যটনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাওয়া পর্যটকদের হাতে জুম্ম নারীরা নানাভাবে  নিগৃহীত হচ্ছেন।  মদ, জুয়া, নারী পাচার, জুম্ম নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহারসহ নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।  আর সেনাবাহিনীর স্থানীয় সদস্যরাই এসবের উৎসাহ যোগাচ্ছে।  এ অবস্থা কি চলতে দেয়া যায়?

জুম্মদের পোড়া ঘরের ছাইয়ের স্তুপে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে এক সেনা জোয়ান। # ফাইল ছবি।
জুম্মদের পোড়া ঘরের ছাইয়ের স্তুপে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে এক সেনা জোয়ান। # ফাইল ছবি।

সাজেকবাসীর  আন্দোলনের ফসল ‘উজো বাজারকে’ ভেঙে দিতেও চলছে নানা চক্রান্ত। সেখানে ৫৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের পাঁয়তারা চলছে।  এটা করা হলে ওই এলাকা থেকে জুম্মরা চিরতরে উচ্ছেদ হয়ে যাবে।

শুধু তাই নয়, সাজেকের নিরীহ জুম্ম শিশুদেরকেও আনন্দের খোরাক বানানো হচ্ছে। পর্যটকবাহী গাড়ি থেকে চকলেট, বিস্কুট বিলিয়ে দিয়ে তাদেরকে করা হচ্ছে মৃত্যুর মুখোমুখি। চকলেটের লোভে শিশুরা গাড়ির চাপায় মারা পড়ছে।  গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছায়া রাণী চাকমা নামে  ৮ বছর বয়সী ২য় শ্রেণীতে পড়ুয়া এক মেয়ে  শিশু মারা গেছে পর্যটকদের বিলিয়ে দেয়া চকলেট কুড়াতে গিয়ে। কি যে নির্মম রসিকতা চলছে সাজেকবাসীদের নিয়ে!! এটা কি জুম্মরা ভেবে দেখছেন?

মোট কথা, পর্যটনের নামে সাজেকে চলছে জুম্ম উচ্ছেদের পাঁয়তারা। আর তা বাস্তবায়ন করছে লক্ষ্মী বিজয় ও বুদ্ধপুদি চাকমার হত্যাকারীরাই।  কাজেই, উন্নয়নের নামে জুম্ম উচ্ছেদকারী পর্যটন কেন্দ্র বয়কটের মাধ্যমেই এর বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।

[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]

—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More