সাজেকে পর্যটন-উন্নয়নের আগুনে পুড়ে গেলো পাহাড়িদের ৩৫টি বসতবাড়িও

গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) সাজেক পর্যটনে অগ্নিকাণ্ডের চিত্র। ছবিগুলো সংগৃহিত
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পাহাড়ে স্থানীয় পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে গড়ে তোলা হয়েছিল বিশাল পর্যটন কেন্দ্র। অপরিকল্পিতভাবে জনবসতি এলাকায় গড়ে তোলা এই পর্যটন কেন্দ্র এখন সেখানকার পাহাড়িদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পর্যটনের কারণে একদিকে সেখানে বসবাসরত ত্রিপুরা, লুসাই, পাংখোয়াসহ পাহাড়িদের উচ্ছেদের শিকার হতে হচ্ছে, অন্যদিকে বস্তির মতো রিসোর্ট-কটেজ, হোটেল-মোটেলসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। আর এই অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্টের সাথে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে সেখানকার গরীব অসহায় পাহাড়িদের ঘরবাড়ি।
গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সেই সাজেক পর্যটনে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্ট, কটেজ, দোকান, ঘরবাড়িসহ শতাধিক স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে ত্রিপুরা ও লুসাইদের ৩৫টি বসতবাড়িও রয়েছে।
ত্রিপুরা ও লুসাই সম্প্রদায়ের মধ্যে যাদের বাড়ি পুড়ে গেছে তাদের একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাওয়া গেছে। তালিকায় দেখা গেছে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৯টি ও লুসাই সম্প্রদায়ের ১৬টি, মোট ৩৫টি বাড়ি পুড়ে গেছে।
উক্ত তালিকা অনুসারে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- ১. মিঠুন ত্রিপুরা, ২. ববিন ত্রিপুরা ৩. মঞ্জিরি ত্রিপুরা, ৪. জসিম ত্রিপুরা, ৫. খুশি রাম, ৬. বিশ্ব বাবু ত্রিপুরা, ৭.রঞ্জন ত্রিপুরা, ৮. মুখসে ত্রিপুরা. ৯.সুমন ত্রিপুরা, ১০.রসরঞ্জন ত্রিপুরা, ১১. জাপান মালা, ১২.সুতো মনি, ১৩. ডব লাল, ১৪. ধন বাবু, ১৫. সন্তোষ ত্রিপুরা, ১৬. বীরবসু, ১৭.কই মিনি, ১৮.গালাং ত্রিপুরা ও ১৯. কইরি ত্রিপুরা
আর লুসাই সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- ১. জেরি লুসাই, ২.জামই বুড়া, ৩.যে মা. ৪.মান হুন, ৫. রেংগা, ৬.চাওয়া, ৭. বাল ভুয়ান, ৮. জামা, ৯. মারুয়াটি, ১০.সেনি লুসাই, ১১. মাম্পুই, ১২. থানা লুসাই, ১৩.নাইজওয়ালা, ১৪.ওয়া তুই রাম, ১৫.তন লুইয়া ও ১৬. ডেবিট লুসাই।
গতকাল অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছে পর্যটন কেন্দ্রের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে।
রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় বলছে, সাজেক কটেজ মালিক সমিতির নেতাদের সাজেক ভ্যালি উপত্যকায় পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা (রিজার্ভার) রাখা, লাইসেন্স নেওয়া, অগ্নিনির্বাপক স্প্রে ও কটেজ-রিসোর্টের জনবলকে যথাযথ ট্রেনিং দেওয়ার বিষয়ে বারবার বলা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। (সূত্র: সারাবাংলা)।
স্থানীয় ও পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত্রতত্র রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ও খালি স্থান না রাখার ফলে সাজেক পর্যটনে বার বার এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। তাই এ ধরনের ঘটনার দায় সম্পূর্ণ পর্যটন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায়।
শুধু অগ্নিকাণ্ড নয়, সাজেক এখন পরিবেশ বিপর্যয়েরও সম্মুখীন। পর্যটনের প্রসার-প্রচারের জন্য সেখানে সংযোগ সড়ক, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে ব্যাপকভাবে পাহাড় ও বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলা হয়েছে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের ওপর। ফলে সেখানে পর্যান্ত পানি পাওয়াও এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনার ফলেও সাজেক পাহাড় হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিকতা। হোটেল, রিসোর্টে বেড়ে গেছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। পর্যটকদের যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জে পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন সেখানকার মানুষ।
উল্লেখ্য, সাজেক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সময় স্থানীয় পাহাড়িদের অনেকে সেখান থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছিলেন। এখনো যারা নিজেদের ভিটেমাটি আঁকড়ে থেকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন তাদরকেও উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ফলে গতকাল রিসোর্টের অগ্নিকাণ্ডে পার্শ্ববর্তী যে পাহাড়ি পরিবারগুলো বসতবাড়ি পুড়ে গিয়ে সহায়-সম্বল হারিয়েছেন তারা কী আদৌ সেখানে টিকে থাকতে পারবেন- এ নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।