সাজেকে বর্ণাঢ্য বৈ-সা-বি র্যালি
সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি (বৈসু, সাংগ্রাই, বিঝু, বিষু, বিহু…) উপলক্ষে রাঙামাটির সাজেকে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য বৈ-সা-বি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“বৈ-সা-বি শুধু আনন্দ উৎসব নয়, ঐক্য-সংহতি-সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক, আসুন, বৈ-সা-বি’র চেতনা ধারণ করে জাতীয় অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট হই” এই শ্লোগানকে ধারণ করে ‘সার্বজনীন বৈ-সা-বি উদযাপন কমিটি, সাজেক এর উদ্যোগে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালিতে নিজস্ব জাতীয় পোষাকে এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এসবয় বিভিন্ন শ্লোগান-দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেষ্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে চাকমা জাতির লোকগীতি উভোগীত সহ নানা শ্লোগানে মুখরিত হয় গোটা এলাকা।

আজ বুধবার (১২ এপ্রিল ২০২৩) সকাল ১০টায় সাজেকের হাজাছড়া, রেতকাবা ও উজো বাজার এলাকা থেকে লোকজন পৃথক পৃথকভাবে র্যালি সহকারে রেতকাবা দ্বপদায় মিলিত হয়। পরে সেখান থেকে সম্মিলিত র্যালি নিয়ে তারা গঙ্গারাম-কাচলং সেতুতে গিয়ে র্যালি শেষ করে এবং গঙ্গারাম ও কাচলং নদীতে ফুল দিয়ে মঙ্গল কামনা করেন।

এরপর উজো বাজার সরকারি স্কুল মাঠে এক আলোচনা সভা আয়োজন করে উদযাপন কমিটি। এতে অংশগ্রহণকারী সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাজেক কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা, বিমল কান্তি চাকমা, জব্বইতাং মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সভায় নেলসন চাকমা বলেন, চৈত্র সংক্রান্তির এই উৎসবের জন্য আমরা সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি। পুরোনো বছরের দুঃখ-কষ্ট ভুলে নতুন বছরে যাতে সুখ-শান্তিতে জীবন অতিবাহিত হয় সেজন্য আমরা নদীতে ফুল দিয়ে প্রার্থনা করি।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ভালোভাবে উৎসব করার মতো পরিবেশ নেই। উৎসব ঘনিয়ে এলে পাহাড়িদের নানা দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এখানে পাহাড়িদের উপর যুগ যুগ ধরে নানা নিপীড়ন-বৈষম্য জারি রখেছে। বর্তমানে পাহাড়ে আমাদের কারোর নিরাপত্তা নেই। পাহাড়িদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে। ফলে জাতিগতভাবে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যত আমাদের সামনে। পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পরও পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এখানকার মানুষ মনপ্রাণ উজার করে উৎসবে সামিল হতে পারে নাই। তারপরও তিনি আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের ঐক্য-সংহতি, ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে চৈত্র সংক্রান্তির এ উৎসবটি পালন করে থাকে। তার মধ্যে চাকমারা এই উৎসবে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চংঙ্গারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু নামে অভিহিত করে থাকে। এ সকল জাতিসত্তার উৎসবের আদ্যক্ষর সমষ্টিকে সম্মিলন ঘটিয়ে এটি বৈ-সা-বি উৎসব হিসেবে এখন পরিচিতি লাভ করেছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন