সাজেকে বাঘাইহাট সেনা জোনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মহড়া, জনমনে নানা আশঙ্কা

0

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১০ মে ২০২৩

রাঙামাটির সাজেকে বাঘাইহাট সেনা জোন গতকাল মঙ্গলবার (৯ মে ২০২৩) এক সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মহড়া পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে এলাকার জনমনে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহড়ার অংশ হিসেবে প্রথমে বাঘাইহাট সেনা জোনের ৬ নং চেকপোস্টের সামনে (বাঘাইহাট বাজারের পার্শ্ববর্তী) ২/৩টি ছোট ছোট খুপড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়। পরে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বাঘাইহাট বাজার থেকে প্রায় ২০০ জন বাঙালিকে ডেকে নিয়ে এসে একটি জায়গায় জড়ো করা হয়। এরপর তাদেরকে ‌‘চাকমা’ সাজিয়ে উজো উজো ধ্বনি দিয়ে উক্ত খুপড়ি ঘরগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় জোনের এক সেনা কর্মকর্তা নিজেই মাইকে ‌‘উজো উজো’ করে শ্লোগান দেন বলে অংশগ্রহণকারীদের একজন জানিয়েছেন।

মহড়ার পর যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের প্রত্যেককে ২০০ করে টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনী কেন এমন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মহড়া পরিচালনা করেছে তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তবে এমন মহড়ায় এলাকাবাসী বিশেষত পাহাড়ি জনগণ নানা আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এলাকার এক জনপ্রতিনিধি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‌‌‘এটা পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে কিভাবে হামলা করতে হবে তার একটা প্রশিক্ষণ হতে পারে’। তিনি ভবিষ্যতে যাতে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্য পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে বাঘাইহাট বাজারের এক বাঙালি ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাঙালিদের ডেকে নিয়ে কেন এমন কাণ্ড করা হলো আমরা তো কোন কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ‌জানানো হয়েছে যে, ২০০৮ সালে সাজেকে যে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল সেই ঘটনাকে স্মরণ করে নাকি এটা করা হয়েছে’। অবশ্য তিনি এটাকে ‘পাগলামি’ বলেও মন্তব্য করেন।

তবে সেনাবাহিনীর এমন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মহড়ায় এলাকার জনমনে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন মহড়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে আবারো পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সহিংসতার পরিকল্পনা করছে কিনা তা নিয়ে তারা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, দেশে জরুরী অবস্থা চলার সময় বিগত ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল সাজেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলার বাঙালিদের কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছিলেন পাহাড়িরা। এ সময় পাহাড়িদের ৪টি ৮০টি বাড়ি (১টি গীর্জা, ১টি ইউনিসেফ স্কুলসহ) অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০১০ সালের ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি আবারো পাহাড়িদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে বুদ্ধপুদি ও লক্ষ্মী বিজয় চাকমা সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এ হামলায় পাহাড়িদের ১১টি গ্রামের ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৫০০ ঘর জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছিল।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More