সাজেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক ভুয়া ‘অস্ত্র উদ্ধারের’ প্রতিবাদে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

0


সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

ইউপিডিএফকে ফাঁসাতে বাঘাইহাট জোনের সেনাবাহিনী কর্তৃক ভুয়া ‘অস্ত্র উদ্ধারের’ প্রতিবাদে রাঙামাটির সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) দুপুরে সাজেকের উজোবাজার এলাকায় একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সেনাবাহিনীর কথিত ‘‌‌‌অস্ত্র উদ্ধার’কে ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দেন। মিছিলটি উজোবাজার প্রদক্ষিণ শেষে পর্যটন সড়কের ওপর সমাবেশ করা হয়।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পরানী চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি জ্যোতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক অনুপম চাকমা, সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবুধন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনে বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি সুখী চাকমা।

সমাবেশে ছাত্রনেতা জ্যোতি চাকমা বলেন, আজকের এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক ভুয়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ঘৃণা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক সেনাবাহিনীর সাজানো নাটক সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেছে।


তিনি বলেন, বাঘাইহাট জোনের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইউপিডিএফকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউপিডিএফের ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালানো এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার নগ্ন ষড়যন্ত্র।

তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই জানি, ইউপিডিএফ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গণাতন্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে ইউপিডএফ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইউপিডিএফকে দমন করতে হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতারসহ নানা দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।

জ্যোতি চাকমা বলেন, কথিত এই ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক দেখিয়ে সেনাবাহিনী জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং গণআন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং জনগণকে এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করি। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের ন্যায্য অধিকারে দাবি থেকে পিছু হটাতে পারবে না।

তিনি অবিলম্বে এই ভুয়া ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটকের নিরপেক্ষ তদন্ত, ইউপিডিএফ কর্মীদের উপর হয়রানি বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

যুবনেতা অনুপম চাকমা বলেন, গতরাতে সেনাবাহিনীর কথিত ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটকের কথা আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এ ধরনের নাটক সাজিয়ে তথাকথিত নিরাপত্তার নামে আমাদের ওপর দমনপ-পীড়ন চালাচ্ছে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নির্মাণ করতে পারছি না। তিনি সবাইকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও দমনপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।


বাবুধন চাকমা বলেন, আমরা জুম্ম জনগণ দীর্ঘ বছর ধরে নিপীড়িত-নির্যাতিত। তার মধ্যে আমরা সাজেকবাসী সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। আমরা এখানে যাই করি না কে সবক্ষেত্রে ইউপিডিএফের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। জনমানুষের কল্যাণে যখন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন সেনাবাহিনী-সরকারের পক্ষ থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাজেকবাসী।

তিনি সেনাবাহিনীর কথিত ‘অস্ত্র উদ্ধার’ বিষয়ে বলেন, ‘গতকাল দিবাগত মধ্যরাতে বাঘাইহাট জোন থেকে একদল সেনা সদস্য সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নরেন পাড়ায় গিয়ে অবস্থান করে। তারা আজ ভোর প্রায় ৫টার সময় অতর্কিতভাবে ৩০/৩৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। সেই গুলির শব্দে এলাকার জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে এলাকার জনগণ এর সাক্ষী রয়েছেন।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের টাকায় কেনা, জনগণের টাকায় কেনা সেই গোলাবারুদ শুধু শুধু একটি নাটক মঞ্চস্থ করার কারণে কেন ব্যয় করা হবে? সেনাবাহিনী তাদের হীন উদ্দেশ্য সফল করার জন্য শুধু আজকে নয়, অতীত থেকে তারা নানাভাবে তাদের এমন অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

তিনি স্পষ্টভাষায় বলেন, সেনাবাহিনীর এই নাটক, এই টালবাহানা সাজেকবাসী অনেক আগে বুঝে গেছে। কাজেই এ ধরনের নাটক দেখিয়ে সাজেকবাসীর মন ভুলিয়ে রাখা যাবে না। আমরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এ ধরনের হীন কাজ আশা করিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কাজ দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখা। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীর দ্বারা নিত্য নতুন নাটক সাজিয়ে যদি জনগণকে হয়রানি ও বিভ্রান্ত করা হয় তাহলে সেটা এক প্রকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এখানে সেনাবাহিনীই হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহী। আমি মিথ্যা অস্ত্র উদ্ধার নাটক সাজানো সেনাদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকের পর থেকে অদূর ভবিষ্যতে আর এ ধরনের সাজানো নাটক পরিচালনা না করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনী প্রধানের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি।’

হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী সুখী চাকমা বলেন, ইউপিডিএফকে হেনস্তা করতে সেনাবাহিনী বার বার কথিত ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক করে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন আগেও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা এলাকায় এক অস্ত্র উদ্ধার নাটক দেখাতে গিয়ে সেখানে ইউপিডিএফের একটি তিন তারকা খচিত পতাকা দেখিয়েছে, মিডিয়ায় প্রচার করেছে, যা ইউপিডিএফের পতাকার সাথে কোন মিল নেই। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউপিডিএফকে দমন করা।   

তিনি নরেন পাড়ায় কথিত অস্ত্র উদ্ধার ঘটনাটি সম্পুর্ণ সাজানো নাটক উল্লেখ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনী রাতে নরেন পাড়ায় গিয়ে আজ ভোরে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নরেন পাড়াবাসীকে আতঙ্কিত করেছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী পাহাড়িদের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং তারা দমনপীড়ন চালিয়ে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাচ্ছে। কথিত উন্নয়নের নামে সাজেকে পাহাড়ি অধ্যুষিত অঞ্চলে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।  অথচ  এখানে উচ্চ শিক্ষা ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সাজেকে এলাকাবাসী একটি কলেজ নির্মাণ করতে গেলে সেনাবাহিনী তাতে বাধা দিচ্ছে। যার কারণে কলেজ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় যে, সেনাবাহিনী চায় না সাজেকের মানুষ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করুক। তারা আমাদেরকে অশিক্ষিত অবস্থায় রেখে নিপীড়ন-নির্যাতন করতে চায়।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত আমাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের মা-বোনেরা যে ধর্ষণ, নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এসব অনেক ঘটনাও সেনাবাহিনীর সদস্য দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। তাদের এসব অপরাধ ঢাকতেই আজকে এ ধরনের মিথ্যা ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক করছে তারা।

তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সেনাবাহিনী যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আমাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন বন্ধ হবে না। আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।

তিনি সাজেকের নরেন পাড়ায় মিথ্যা অস্ত্র উদ্ধার নাটকের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান এবং মিথ্যা সংবাদ প্রচার না করে সত্য ঘটনা তুলে ধরতে দেশের সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More