সাম্প্রতি সেনা-সেটলার হামলা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

0

সৌম্য চাকমা


দীঘিনালায় সেটলারদের অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া দোকানপাট


১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে ভয়াবহ সেনা-সেটলার হামলার পর ২১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ, লে. জে. (অব:) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও সুপ্রদীপ চাকমা রাঙামাটি সফর করেন। এ সময় সাংবাদিকদের হাসান আরিফ বলেন, “দেশের বাইরের একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার রাঙামাটির সহিংস ঘটনা ঘটেছে।” (itvbd.com ও সেদিনের অন্যান্য নিউজ পোর্টাল দেখুন) পরদিন আমেরিকার দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স হেলেন লাফেভ-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েটে তার সাথে দেখা করতে গেলে তাদেরকেও তিনি একই কথা বলেছেন: “Conspiracy is being hatched from outside to destroy harmony in CHT, including Rangmati.” (https://www.thesouthasiantimesbd.com/nationwide/news/23769)

উপদষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ রাঙামাটিতে পরিদর্শন শেষে কথা বলছেন। ছবি: সংগৃহিত

তার এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কতটুকু সঠিক? প্রথম কথা, তিনি তার অভিযোগের সমর্থনে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করেননি। কোন অভিযোগ তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা না হলে আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না, আদালত উক্ত অভিযোগ সত্য বলে রায় দিতে পারে না। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমর্থনেও যদি তথ্য বা প্রমাণ হাজির করা না হয়, তাহলে তা জনগণ কীভাবে সত্য বলে বিশ্বাস করবে?

তার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব অবস্থাকে অস্বীকার করে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল ও রক্ষা করে এবং আসল ঘটনাকে ঢামাচাপা দেয়। তার এই বক্তব্য ইতিমধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উৎসাহিত করেছে। দেশের কয়েকটি জায়গায় পাহাড়িরা হেনস্থার শিকার হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

আমেরিকার দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স হেলেন লাফেভ-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সাথে কথা বলছেন উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ


আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কাছ থেকে একটি বিষয় প্রত্যাশা করি; তা হলো তারা যেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-পাতি মন্ত্রীদের মতো না হন। তাদের মতো কথা না বলেন, তাদের মতো আচরণ না করেন।

৫ আগস্ট তার পতনের আগে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে পরিচালিত ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। আন্দোলনকারীদের গায়ে ঢালাওভাবে জামাত-শিবিরের লেবেল এঁটে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে তার শেষ রক্ষা হয়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করার জন্য ইতিপূর্বেও বহুবার বিদেশী ষড়যন্ত্র বলে শাসকগোষ্ঠী প্রচার করা হয়েছে। আমরা আর এ ধরনের কথা শুনতে চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই, সাম্প্রদায়িক সেটলার হামলার অবসান চাই। ভয়ভীতি-মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে থাকতে চাই। #

২৪.০৯.২০২৪



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More