সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ

0

সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি সদরে কাসেম স’মিল-পেট্রোল পাম্পের সামনে খাগড়াছড়ি টু চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে।



খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

“পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র রাজনৈতিক সমাধান” এই শ্লোাগনে আদালতের মাধ্যমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কাসেম স’মিল-পেট্রোল পাম্পের সামনে খাগড়াছড়ি টু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ইউনিট।

বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০:৪৫টা থেকে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান ধর্মঘট পালনের সময় পেট্রোল পাম্প থেকে খাগড়াছড়ি গেট ও পেট্রোল পাম্প থেকে খাগড়াছড়ি চেঙ্গী ব্রীজ পর্যন্ত শত, শত গাড়ি আটকা পড়ে। এ সময় এ্যাম্বুলেন্স ও শিক্ষার্থীদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।

অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেড় হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী ও নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক লালন চাকমা, পার্বত্য নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কনিকা দেওয়ান, হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষেদের জেলা সভাপাতি শান্ত চাকমা।

পিসিপি নেতা শান্ত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দশকের পর দশকে উন্নয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের শোষণ করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তারা ১৯০০ সালের রেগুলেশনের ভিত্তিতে জুম্মদের প্রথাগত ভূমি অধিকার ভোগ করছে। এই আইনের মাধ্যমে প্রথাগত নেতৃত্ব রাজা, হেডম্যান, কার্বারিগণ সমাজে শৃঙ্খল রক্ষা, সামাজিক বিচার ইত্যাদি সম্পাদক করে আসছেন।


জুম্মদের এই যে প্রথাগত অধিকার তা সুরক্ষা না দিয়ে সরকার এটি বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর আরো বেশি শোষণ-শাসন চাপিয়ে সরকারের এটি পরিকল্পিত নীলনক্সা।

শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সংরক্ষিত কোটা ব্যবস্থাও সরকার তুলে দিয়েছে। যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নারী নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, আমাদের জুম্ম জনগনের দাবি ১৯০০ সালের রেগুলেশন বহাল রাখা হোক। আমাদের প্রথাগতভাবে কার্বারি, রাজা হেডম্যানদের স্বশাসনের যে ক্ষমতা তা বাতিল করে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।

তিনি বলেন, এ যাবত নারী ধর্ষণ, ভুমি বেদখলের কোন সুষ্ঠু বিচার আমরা পাইনি। ১৯০০ সালের রেগুলেশন নিয়েও আমরা সুষ্ঠু রায় পাবো কিনা বলতে পারছি না। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও আমরা জুম্ম জনগণ আজও পরাধীন।

কনিকা দেওয়ান বলেন, ১৯০০ সাালের আইন না থাকলে আমাদের ভূমি অধিকারসহ প্রথাগত আইন ও অধিকারগুলো আর থাকবে না। আমরা যুগের পর যুগ প্রথাগত অধিকার ভোগ করে আসছি। সরকার এই আইনটি বাতিলের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে আমাদের ভূমি কেড়ে নেয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কারণ প্রচলিত আইনে যার দলিল আছে সেই জমির মালিক। কিন্তু পাহাড়িরা প্রথাগতভাবেই তাদের জায়গা-জমি ভোগদখল করে আসছে।

তিনি ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বলবৎ রাখার দাবি জানান।

এ সময় তিনি পাহাড়ি কোটা বাতিল করে দেয়ার বিষয়েও তুলে ধরেন।


ইউপিডিএফ সংগঠক লালন চাকমা বলেন, ১৯০০ সালে প্রণীত শাসন বিধি আমাদের জুম্মদের রক্ষাকবচ। এই আইনকে বাতিলের ষড়যন্ত্র জুম্ম জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি আরো বলেন, ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধের মাধ্যমেও আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এখনো সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র যদি বন্ধ করা না হয়, জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে যদি কোন আইন প্রণয়ন করা হয় তাহলে আমরা তা আমরা মেনে নেবে না। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।

তিনি আদালতের মাধ্যেমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের মাধ্যমে রাজা-হেডম্যন-কার্বারী পদবী বিলোপের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার ও আইন সুরক্ষার জন্য সরকারের প্রতি অহ্বান জানান।

অবস্থান ধর্মঘট শেষে পেট্রোল পাম্প এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বাস টার্মিনাল, চেঙ্গী স্কোয়ার, উপজেলা গেট প্রদক্ষিণ করে স্বনির্ভরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More