সেনাশাসন প্রত্যাহারসহ ‍বিভিন্ন দাবিতে পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশ

0

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট ২০২৪

অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভ্যূত্থানে অংশগ্রহনকারী সকল দলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট ২০২৪) সকাল সাড়ে ১১ টার সময় ‘ছাত্র-জনতার জোট’-এর ব্যানারে পৃথক দুটি স্থান থেকে মিছিল শুরু হয়। পানছড়ি বাজারের উত্তর দিক থেকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা গাড়ি যোগে সমাবেশ স্থলে যাওয়ার পথে পানছড়ি জোনে আটকে দেওয়া হয়। পরে লোকজন ভিন্ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে গিয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে মিছিল সহকারে পানছড়ি বাজারে দক্ষিন দিক কলেজগেট থেকে আসা মিছিলের সাথে বাজারে একত্রিত হয়ে বাস টার্মিনাল ঘুরে এসে পানছড়ি বাজারে জিরো মাইলে সমাবেশে মিলিত হয়। সেনাবাহিনীর বাধা ও মুখোশদের গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টির পরও মিছিল ও সমাবেশে পানছড়ির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬ হাজার নারী-পুরুষ, ছাত্র ছাত্রী, যুবক-যুবতী অংশগ্রহন করেন।


সমাবেশে সাবেক ইউপি সদস্য সঞ্জয় চাকমার সঞ্চালনায় ও সুনীলময় চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা ও অনীল চন্দ্র চাকমা, সাবেক মহিলা সদস্য ও পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সুজাতা চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক সুরমঙ্গল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মানিক পুদি চাকমা।

কালাচাঁদ চাকমা বলেন, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ধরে এই দেশের জনগণকে নির্যাতন চালিয়েছিল। আজকে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের কারণে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে আমরা শান্তি চায় এবং পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসুক।


অনিল চন্দ্র চাকমা বলেন, আমরা চাই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। স্বাধীন দেশে আমরা  স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চাই। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমিবেদখল করা হচ্ছে অভিযোগ করেন। তিনি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে জনগণের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পুরো পুলিশ বাহিনী দুর্নীতিগ্রস্থ হয়েছে।

তিনি বলেন এই দেশটা একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক আমরা এই দাবি জানাই।

সুরমঙ্গল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনগণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সমাধান।  তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে মানুষ বিজয় উল্লাস করছে, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে কী অবস্থা চলছে তা আমরা দেখি। আজকে এই সমাবেশে আসতে সেনাবাহিনী আমাদের বাধা দিয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে মুখোশ-সেনাবাহিনীর বাধা দেয়ায় তিনি ক্ষোভ করে বলেন, ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে আমাদের আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না।


সুজাতা চাকমা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর কারণে আমি অনেক খুশি হয়েছি। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে অনেক নিপীড়ন-নির্যাতন করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আওয়ামী লীগের লোকজন অনেক হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আমাকে অনেক ঝামেলা করছিল। যার কারনে আমি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছি। তা নাহলে আমি জীয় হতাম। ভবিষ্যতে আমরা শান্তি চাই। আওয়ামী লীগের মত শাসক আমরা চাই না।

মানিক পুদি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্বশাসন আমরা চাই। আর সরকার উৎখাতের আন্দোলনে যারা খুন হয়েছেন তাদের বিচার ও যারা বন্দি হয়েছেন তাদের মুক্তির দাবি জানাই। আগামীতে যে সরকার আসবে তারা যেন পাহাড়ের পরিস্থিতি ভাল রাখে। কারন আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।

যুব নেতা বরুন চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই দেশে অনেক শাসকের ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের কোন ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। কোন আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও প্রতিটি শাসক শ্রেণি পাহাড়ি জনগণকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে।

তিনি আরো বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্য হয়তো বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু আমাদের জুম্ম জনগণের ভাগ্যে কি লেখা আছে এখনো অজানা।

তিনি সরকার উৎখাতে চলমান আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার ও কারাবন্দী ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়াসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়স্বশাসন দেয়ার আহ্বান জানান।

ছাত্রনেতা সুনীল চাকমা বলেন, পাহাড়ি জনগণকে অবহেলা করে কোন কিছু হতে পারে না। ছাত্র সমাজ আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমাদের অধিকার আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

তিনি বলেন, পাহাড়ে আওয়ামী লীগ এবং সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-গুম চালানো হচ্ছে। এই খুনি ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং ইউপিডিএফের ৩৬৭ জন নেতা-কর্মী খুনের বিচার দাবি করেন।

এদিকে, মিছিল শেষে ফেরার পথে আবারো সেনাবাহিনী বন্দুক তাক করে জোনের দিকে যেতে বাধা দিলেও উত্তেজিত জনতা সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে জোনের দিকে মেইন রোড দিয়ে বের হয়ে যায়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More