সেনা-সন্তু গ্রুপের যৌথ হামলায় নিরীহ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ ও তিন ব্যক্তিকে নির্যাতনের প্রতিবাদে কাউখালীতে বিক্ষোভ

কাউখালি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
রাঙামাটির ঘাগড়ায় সেনাবাহিনী ও জেএসএস সন্তু গ্রুপের যৌথ হামলায় নিরীহ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ ও তিন ব্যক্তিকে শারীরিক নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে কাউখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন ২০২৫) বিকাল সাড়ে ৩টায় কাউখালী উপজেলার ডাবুয়া বাজার থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বৃন্দাবন রাস্তায় গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বিভিন্ন জায়গায় থেকে অন্তত তিন শতাধিক নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে ছাত্র জনতা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ক্যাচিংঅং মার্মার সভাপতিত্বে ও ধুপছড়ি এলাকার যুবক হৃদয় মার্মার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ডাবুয়া বৃক্ষভানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র অমিত চাকমা এবং এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের ফটিকছড়ি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বিউটি মার্মা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালি উপজেলা সভাপতি জিপল চাকমা।

অমিত চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়িরা চরম অনিরাপত্তায় ও আতঙ্কে দিন পার করছি। কখন রাতের অন্ধকারে সেনাবাহিনী গ্রামে ঢুকে নিপীড়ন-নির্যাতন চালায় তা নিয়ে জনগণকে আতঙ্কে, ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আজ ভোর রাতে ঘাগড়ার কজইছড়ি মৌন এলাকায় সেনাবাহিনী ও জেএসএস (সন্তু)-এর সশস্ত্র গ্রুপের যৌথ হামলায় নিরীহ জুমচাষী গুলিবিদ্ধ ও তিন জনকে আটক করে অমানুষিক শারিরীক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
বিউটি মার্মা সেনাবাহিনী কর্তৃক অন্যায়ভাবে তিন গ্রামবাসীকে শারীরিক নির্যাতন ও এলোপাতাড়ি গুলি চালয়ে নিরীহ জুমচাষীকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আজকে কজইছড়ি মৌনে গিয়ে নিরপরাধ জুম চাষিদের অমানুষিক শারিরীক নির্যাতন, গুলির ঘটনা তা আগামীকাল আমাদের পাড়ায় হবে না এর কোন গ্যারান্টি নাই। সেনাবাহিনীর অত্যাচারে আমরা কোথাও শান্তিতে, নিরাপদে থাকতে পারছি না।

তিনি সেনাবাহিনী ও জেএসএস (সন্তু) সশস্ত্র গ্রুপের যৌথ হামলায় নিরীহ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ ও তিন ব্যক্তিকে আটক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন।
তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জিপল চাকমা বলেন, ভোর রাতে সেনা সদস্য ও সন্তু গ্রুপের একটি সশস্ত্র দল যৌথভাবে কজইছড়ি মৌন এলাকায় হানা দিয়ে এলাকা জুড়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায় এবং ডানে উল্লো গ্রামের এক জুমচাষী প্রাকৃতিক কাজে যাওয়ার সময় বাড়ির বাইরে এসে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।
তিনি আরো বলেন, সেনারা ফুরমৌন এলাকার উত্তর মৌনপাড়া গ্রাম থেকে মনসুখ চাকমা, তার ছেলে সিন্ধু মনি চাকমা এবং অন্তর চাকমা নামে তিন নিরী তিন গ্রামবাসীকে আটক করে স্থানীয় একটি স্কুলে নিয়ে গিয়ে হাত বেধে শারীরিকভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। জনগণের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে এবং এলাকার জনমনে ভীতি সঞ্চার করতে সেনাবাহিনী ও সন্তু গ্রুপ যৌথভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, এর আগেও বন্দুকভাঙার মারিচুগে সেনা-জেএসএস মিলে হামলা ও জনগণের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল। আজকের কজইছড় হামলার ঘটনাটিও একই সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১১ দফা নির্দেশনা জারির মাধ্যমে পাহাড়িদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে জাতিগত নিপীড়ন বৃদ্ধি করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও সেই দমনমূলক ১১ নির্দেশনা এখনো বহাল রাখা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো সেনাবাহিনীকে দিয়ে হামলা, দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে।
তিনি নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর হামলা ও আটকের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে আটক তিন গ্রামাবসীকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং নির্যাতিত তিন গ্রামবাসীসহ গুলিবিদ্ধ গ্রামবাসীকে সুচিকিৎসা প্রদান ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশে সভাপতি ক্যাচিংঅং মার্মা বলেন, ফুরোমৌন পাহাড়ে রাতের আঁধারে সেনাবাহিনী এবং জেএসএস মিলে অতর্কিত এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে নিরীহ জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে জেএসএস সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সে এলাকায় ঘাঁটি এ বানাতে চায়। যার কারণে তারা নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপরি ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি এই সমাবেশ থেকে সেনাবাহিনী ও জেএসএসের এমন অপকর্মের জন্য তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাচ্ছি এবং হামলকারীদের শাস্তির দাবি করছি।
তিনি বলেন, পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে নিজের এলাকায়, নিজের বাড়িও পাহাড়িরা নিরাপদে থাকতে পারছে না।
তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, যতই আমরা চুপ থাকব ততই আমাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসবে, আমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমাদের আর ঘরে বসে থাকার আর সুযোগ নেই। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।