স্বনির্ভর-পেরাছড়া হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি চার সংগঠনের

0

খাগড়াছড়ি : ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-ভুক্ত চারটি সংগঠন খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর-পেরাছড়া হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু ইউছুফ আলীকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে সুষ্ঠ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

# সন্ত্রসাীদের ব্রাশফায়ারে নিহতদের কয়েকজন।

আজ মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট ২০১৮) গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সভাপতি সচিব চাকমা এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

তারা বলেন, ‘যে প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাহারার মধ্যে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজার স্বনির্ভরে এত বড় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে সে প্রশাসনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে এ ঘটনার তদন্ত করা কখনোই সম্ভব নয়।’

প্রশাসনের এই পর্বত-প্রমাণ ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য এবং ঘটনার সাথে জড়িত সেনাবাহিনীর একাংশের মদদপুষ্ট জেএসএস সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন এবং বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের কোন মহলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া শহরের কেন্দ্র স্থল থেকে এসে ১০-১২ জন সন্ত্রাসীর পক্ষে ২৫ মিনিট ধরে এভাবে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিজিবি পোস্টের পাশ দিয়ে হেঁটে পালিয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়, আর তাই প্রশাসন কোনভাবে এ হত্যাকা-ের দায় এড়াতে পারে না।’

খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর-পেরাছড়া হত্যাকাণ্ডকে ঠান্ডা মাথায় সংঘটিত একটি পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ কেবল ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজানে সংঘটিত ইসলামী জঙ্গীদের হামলার সাথে তুলনীয়।’

হামলার ২ দিন পরও জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ি শহরে তাদের আস্তানা মহাজন পাড়া, মধুপুর, তেঁতুলতলা ও খাগড়াপুরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ তাদের গ্রেফতার না করে উল্টো ইউপিডিএফ যাতে ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে স্বনির্ভর থেকে দেওয়ান পাড়া পর্যন্ত সেনা টহল জোরদার করেছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান অশান্ত ও অরাজক পরিস্থিতির জন্য সেনাবাহিনীর উগ্রবাদী অংশকে দায়ী করে তারা বলেন, ‘যতদিন জেএসএস-সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইউপিডিএফ এর নেতৃত্বে পরিচালিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের নীতি পরিহার করা হবে না, ততদিন পাহাড়ে এ ধরনের হামলা, রক্তপাত বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।’

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে স্বনির্ভর-পেরাছড়া হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত জেএসএস সংস্কারবাদী সদস্যদের গ্রেফতার ও শাস্তি, হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য দায়ি পুলিশ-বিজিবির সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জেএসএস সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীদের মদদদান বন্ধের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে সংস্কারবাদী জেএসএস-এর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী স্বনির্ভর বাজারে হানা দিয়ে অতর্কিতে কয়েকটি স্থানে এলোপাতাড়ি ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই পিসিপি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক এল্টন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহ সভাপতি পলাশ চাকমাসহ ৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অন্যরা হলেন- উত্তর খবংপয্যা গ্রামের বাসিন্দা ও মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা(৫৩), একই গ্রামের যুবক রুপম চাকমা (২০) ও পানছড়ির উগলছড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী ধীরাজ চাকমা।  হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন।

এদিকে এ ঘটনা শেষ হতে না হতে এর ঘন্টা তিনেক পর পেরাছড়া ও ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মিছিল নিয়ে স্বনির্ভরে আসার পথে পেরাছড়া ব্রিজের সামনে ফের হামলা চালায় সন্ত্রসাীরা। এতে গুরুতর আহত ৭০ বছরের বৃদ্ধ সন কুমার চাকমাকে হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি সেখানে মারা যান। এ হামলায় নারীসহ ৪ জন আহত হয়েছিলেন।
———————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More